ইরানে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে আরেক তরুণী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম হাদিস নাজাফি। কারাজ শহরে বিক্ষোভ চলাকালে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে বেশ কয়েকটি গুলি করে। তাঁর পেট, ঘাড়, ও হৃৎপিণ্ডে গুলি লেগেছে বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন।
১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের ‘নীতি’ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর মাসা আমিনি নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী হিজাব পরেননি অভিযোগে তাঁকে আটক করেছিল পুলিশ। তাঁর মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৭৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিক্ষোভের মধ্যে এক তরুণীর খোলা চুল পেছনে বেঁধে সাহসিকতার সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তিনিই কারাজ শহরে নিহত হাদিস নাজাফি বলে খবর প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। পরে ওই তরুণী বিবিসি ফারসিকে বলেছেন, তিনি জীবিত আছেন। মাসা আমিনি ও হাদিস নাজাফিকে হত্যার প্রতিবাদ করছেন।
নিহত হাদিসের দাফনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, সদ্য খনন করা কবরের কাছে তাঁর ছবির পাশে লোকজন কাঁদছে। সেই ভিডিও টুইট করেছেন মাসিহ আলিনেজাদ নামের ইরানের একজন সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়। এটি নারীদের কাছে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ইরানের নারীরা সাধারণত মাথায় ঢিলেঢালাভাবে স্কার্ফ পরে থাকেন।
ইউরোনিউজের খবরে বলা হয়, ১৯৮১ সালে আইনটি কার্যকর করা হলে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল, যা এখনো বিক্ষিপ্তভাবে অব্যাহত রয়েছে।
ইরানের কর্মকর্তারা গতকাল বলেন, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকার সড়কে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
তেহরানে বিক্ষোভকারীরা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পতন চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন। স্লোগানে স্লোগানে তাঁরা বলেছেন, ‘স্বৈরশাসক নিপাত যাক।’
বিক্ষোভের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে আইএইচআর। ছবিতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার পরও বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নরওয়েভিত্তিক কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের সানন্দাজ এলাকায় নারীরা হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গাড়িচালকেরা হর্ন বাজাচ্ছেন।
বিক্ষোভে উসকানির অভিযোগে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন–পীড়ন চালানোর নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ বিক্ষোভের সমর্থনে গত রোববার লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছে।