ইরানের একটি আদালত এক বাবাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। গত বছরই তাঁর ২২ বছর বয়সী ছেলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ছেলেকে যাতে ক্ষমা করা করা হয়, সে জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন এই বাবা। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হন।
কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তির নাম মাশাল্লাহ কারামি। তাঁর আইনজীবী আলী শরিফজাদেহ আরদাকানি গতকাল শনিবার এক্সে বলেন, রাজধানী তেহরানের উপশহর করজের একটি বিপ্লবী আদালত মাশাল্লাহ কারামিকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। বেআইনিভাবে সমাবেশের আয়োজন ও অনুদান সংগ্রহের অভিযোগে তাঁকে এই দণ্ড দেওয়া হয়।
আইনজীবী আলী শরিফজাদেহ আরদাকানি আরও বলেন, এই রায়ে ত্রুটি আছে। তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
মাশাল্লাহ কারামির ছেলের নাম মোহাম্মদ মেহেদি কারামি। ইরানের আধা সামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার ঘটনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
মেহেদি কারামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দুই মাস আগে বিক্ষোভের মধ্যে ইরানের আধা সামরিক বাহিনীর এই সদস্য নিহত হন।
পুলিশি হেফাজতে ইরানের কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর জেরে দেশটিতে ২০২২ সালে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল। পরে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েক মাস ধরে এই বিক্ষোভ চলে।
ইরানে নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাসাকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির নীতি পুলিশ। ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়।
মাশাল্লাহ কারামি তাঁর ছেলের জীবন রক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভিডিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আবেদনে কর্ণপাত করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের জানুয়ারিতে মাশাল্লাহ কারামির ছেলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পরে এই বাবা তাঁর ছেলের কবর, আত্মীয়স্বজনসহ অন্যদের শোকের ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।
মাশাল্লাহ কারামিকে ২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে কারা হেফাজতে রাখা হয়।
গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় চোখ বন্ধ করে না থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। রাইসি নিজে একসময় প্রসিকিউটর ও বিচার বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চলতি সপ্তাহে বলেছে, ইরানে ২০২২ সালের বিক্ষোভের ঘটনায় এখন অন্তত আট ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, ইরানে বিক্ষোভ-সম্পর্কিত মামলায় মাশাল্লাহ কারামির ছেলেসহ এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে চরমভাবে অন্যায় ভুয়া বিচারের পর ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।