অবরোধ তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে

হামাসকে কঠিন শর্ত ইসরায়েলের

বিদ্যুৎ, খাবার, পানি ও জ্বালানি সরবরাহে অবরোধ তুলে নিতে হামাসের হাতে বন্দী সব ইসরায়েলির মুক্তির দাবি তেল আবিবের।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় পরিবারের অনেক সদস্যকেই হারিয়েছেন এই ফিলিস্তিনি। বেঁচে থাকা দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল গাজার রাফা শহরে
ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েল। টানা ছয় দিন ধরে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, খাবার, পানি বন্ধ করে গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ইসরায়েল সরকার বলছে, হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তি না দেওয়া হলে এই অবরোধ তুলে নেওয়া হবে না।

গত শনিবার সকালে হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত মানুষের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। ইসরায়েলে ঢুকে পড়া হামাস যোদ্ধাদের হামলায় প্রাণ গিয়েছে তাঁদের। এ ছাড়া বহু ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। তাঁদের মধ্যে ৯৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে ইসরায়েল সরকার।

এই বন্দীদের মুক্তির শর্ত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অপহৃত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া না হবে, ততক্ষণ গাজায় বিদ্যুতের কোনো সুইচ চালু করা হবে না, পানি সরবরাহের কোনো পথ খুলে দেওয়া হবে না এবং জ্বালানির কোনো ট্যাংক প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

গত সোমবার থেকে গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এতে আগে থেকেই বোমায় বিধ্বস্ত হওয়া উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দা আরও সংকটে পড়েন। ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের পর গত বুধবার গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নাগাদ উপত্যকাটির হাসপাতালের জেনারেটরগুলোর জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে। এদিকে ইসরায়েলের হামলায় ছয় দিনে ১ হাজার ৪১৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ। আহত ৬ হাজারের বেশি।

ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

গতকাল তেল আবিব সফরে গিয়ে ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। আজ শুক্রবার জর্ডান সফর করার কথা রয়েছে তাঁর। সেখানে তিনি দেশটির বাদশাহ আবদুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। হামাসবিরোধী হিসেবে পরিচিত হলেও মাহমুদ আব্বাস সরাসরি গোষ্ঠীটির শনিবারের হামলার সমালোচনা করেননি। বরং ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবহেলা থেকে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

এদিকে হামাসের প্রতি হঁশিয়ারি দিয়ে বুধবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের সব সদস্যকে ‘মরতে হবে’। তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করবে ইসরায়েল। একই সঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেছেন, ‘হামাস হলো দায়েশের (জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট) মতো। আমরা হামাসকে ধ্বংস করে ফেলব। যেমন করে বিশ্ব দায়েশকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’

ইরান ও সৌদির আলোচনা

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন। সম্পর্ক জোড়া লাগাতে গত মার্চে মাসে তেহরান-রিয়াদের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তির পর এই প্রথম দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে কথা হলো। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাইসি ও মোহাম্মদ বিন সালমান আলোচনা করেছেন।

ফোনালাপে ইরানি প্রেসিডেন্টকে সৌদির যুবরাজ এই বলে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি চলমান সংঘাত বন্ধে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সব সম্ভাব্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।