‘লাশ এত বেশি, যে কাফনের কাপড়ও যথেষ্ট পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে থাকা লাশগুলো বোমার আঘাতে এতটাই থেঁতলে ও বিকৃত হয়ে গেছে যে চেনা যায় না।’ রোববার কথাগুলো বলছিলেন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দেইর আল বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালের একজন চিকিৎসাকর্মী।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরামহীন হামলায় প্রতিদিন এত ফিলিস্তিনি হতাহত হচ্ছেন যে এ হাসপাতালে তাঁদের রাখা বা ঠাঁই দেওয়ার জায়গা হচ্ছে না। লাশে হাসপাতালের হিমঘরগুলো ভরে গেছে। হাসপাতালের আঙিনায় সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে নতুন আসা লাশগুলো। একটি ছবিতে হাসপাতালের ভেতরে বেশ কয়েকটি শিশুর লাশ পাশাপাশি রাখতে দেখা গেছে।
রোববার গাজার দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হামলায় ২৬৬ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১৭ জন শিশু। সংঘাত শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের বোমায় ৪ হাজার ৬৫১ জন নিহত হয়েছে। আহত ১৪ হাজার ২৪৫ জন। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গাজায় হামলা আরও জোরদার করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি। শনিবার রাতে তিনি বলেন, গাজার উত্তরাংশে (গাজা সিটি) এখনো যারা আছে, তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণে চলে যেতে হবে। যারা যাবে না তাদের হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ধরে নেওয়া হবে।
এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে চলছে হাহাকার। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিশুদের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সেখানে রুটির দোকানের সামনে মানুষের লম্বা লাইন লেগে আছে। তবে সহজে রুটি পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ময়দা ও বিদ্যুতের অভাব।
রুটির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইসরায়েলের নির্দেশে উত্তর গাজা থেকে খান ইউনিসে পালিয়ে আসা সালেহ এসকাফিও। তিনি বলেন, ‘আমরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি। সেই ভোর থেকে রুটির জন্য অপেক্ষা করছি। শিশুরা অভুক্ত। পরিস্থিতি মর্মান্তিক।’
এমন দুর্দশার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যে এক চুক্তির জেরে প্রতিদিন গাজায় ২০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি পাওয়া গেছে। শনিবার মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে প্রথম ২০ ট্রাক ত্রাণ পেয়েছে গাজার বাসিন্দারা। রোববারও তাদের হাতে ত্রাণ পৌঁছেছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, এটি উপত্যকাটিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণের ৪ শতাংশও না।
এদিকে গাজায় ত্রাণসহায়তা হিসেবে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। জাতিসংঘ বলছে, হাসপাতালগুলোয় জেনারেটর চালু রাখতে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি প্রয়োজন। এর আগে গত সপ্তাহে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস সতর্ক করে বলেছিল, বিদ্যুৎ ছাড়া গাজার হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হবে।