আশ্রয়ের খোঁজে অনিশ্চিত যাত্রা

উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজায়ও হামলার ব্যাপকতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। সেখানকার কোনো জায়গা এখন নিরাপদ নয়।

দক্ষিণ গাজায় ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও রোগীর জন্য শয্যা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নেই পর্যাপ্ত পানি। এর মধ্যেই আহতদের মেঝেতে রেখে চলছে চিকিৎসা। গতকাল খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে

গাড়িতে বাঁধা তোশক। নিজেদের মধ্য গাজার আগের বাসায় ফিরছে আয়া ফাহমি ও তাঁর পরিবার। যুদ্ধ শুরুর পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অবস্থান পরিবর্তন করতে হলো তাঁদের। এর আগে ইসরায়েলি হামলার মুখে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা।

সাত দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে গত শুক্রবার সকাল থেকে আরও বড় পরিসরে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজায়ও হামলার ব্যাপকতা বেড়েছে। সম্ভাব্য স্থল অভিযানের অংশ হিসেবে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে লিফলেট ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

তিন সন্তানের মা ফাহমি (৩৪) মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্দেশ পেয়ে যুদ্ধ শুরুর ষষ্ঠ দিন আমরা বাড়ি ছেড়ে যাই। তারা বলেছিল, আমাদের এলাকায় হামলা হবে। আমরা দেইর আল-বালাহ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিলাম। সেখানে তিন সপ্তাহের মতো ছিলাম।’

ফাহমি বলেন, ‘এরপর নিরাপদ ভেবে খান ইউনিসে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিই। বিশেষ করে দেইর আল-বালাহর চেয়ে ওই এলাকার দোকানগুলোতে সহজে খাবার কেনা যাচ্ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সেখানে ওই বাসার গাড়ি রাখার জায়গায় আরও ৩০ জনের সঙ্গে আমরা ছিলাম। এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।’

সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময় ফাহমি জানতে পেরেছিলেন, গাজা নগরীতে তাঁদের তাল আল-হাওয়া এলাকার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এরপরও সেখানেই ফিরছেন তাঁরা।

৫২ দিন বিদ্যুৎহীন গাজা

হামাসের হামলার পরপরই গত ৭ অক্টোবর গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি জেডকোর তথ্যের বরাতে জাতিসংঘ বলেছে, ১১ অক্টোবর থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড বিদ্যুৎহীন রয়েছে।

নথি অনুযায়ী, ৮ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। অবশ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে থেকেই গাজার বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতেন না। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ গাজায় দিনে ১৩ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো।

হাসপাতালের পরিস্থিতি ‘অকল্পনীয়’

বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে গাজার বেশির ভাগ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর ইসরায়েলি হামলায় আহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত পরিসরে চলা বাকি হাসপাতালগুলো।

জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিকে ‘অকল্পনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে এক হাজারের মতো রোগী রয়েছে, যা চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্যের তিন গুণ।

হাসপাতাল ভবনের আনাচকানাচে রোগীরা অবস্থান করছেন জানিয়ে গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে; তাঁরা ব্যথায় চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বাইরে চলে গেছে। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে এমনটা অকল্পনীয় বলা চলে।’

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল জেনারেটর চালানোর জ্বালানি প্রবেশ করতে দেয়নি। এতে সেখানকার বেশির ভাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া আল-শিফাসহ উত্তর গাজার প্রধান প্রধান হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।