সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এ নিয়োগ তাঁকে বিচার থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে। সৌদির সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় মামলায় গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এমনটাই বলেছেন মোহাম্মদ বিন সালমানের আইনজীবীরা। খবর রয়টার্সের
খাসোগি ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংসভাবে খুন হন। হত্যার পর তাঁর লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করেন সৌদির এজেন্টরা। সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
কয়েক বছর ধরে কার্যত মোহাম্মদ বিন সালমানই সৌদি শাসন করছেন। খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন যুবরাজ। তবে সৌদির নেতা হিসেবে তিনি দায় নেন।
গত সপ্তাহে এক রাজকীয় ফরমানে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন তাঁর বয়োবৃদ্ধ বাবা দেশটির বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ। এ নিয়োগের আগে তিনি দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা বলেন, আনুষ্ঠানিক পদ না থাকলেও আগে থেকেই যুবরাজ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে একটি মামলা হয়। এ মামলা খারিজের জন্য ওয়াশিংটনের একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে আবেদন করেন যুবরাজের আইনজীবীরা। তাঁরা আদালতে বলেন, রাজকীয় আদেশে পাওয়া পদমর্যাদাবলে (প্রধানমন্ত্রী) যুবরাজ বিচার থেকে দায়মুক্তির অধিকারী। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
মার্কিন আদালতের এ শুনানিতে অন্যান্য মামলার নজির তুলে ধরেন যুবরাজের আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, এসব ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দায়মুক্তির বিষয়টি স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জ্বালানি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার জন্য গত জুলাইয়ে সৌদি সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সফরে গিয়ে তিনি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ‘ফিস্ট-বাম্প’ (পরস্পরের মুষ্টিবদ্ধ হাত স্পর্শ) করেন। পরে বৈঠকে যুবরাজকে বাইডেন বলেন, খাসোগি হত্যার জন্য তাঁকে (যুবরাজ) দায়ী বলে মনে করেন তিনি। মোহাম্মদ বিন সালমান এ হত্যায় জড়িত থাকার কথা বাইডেনের কাছে অস্বীকার করেন।
জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে বলে জোর দিয়ে বলেন তিনি।ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে সৌদি যুবরাজের সমালোচনা করতেন খাসোগি। তিনি তুর্কি নাগরিক হেতিজে চেঙ্গিসকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন।
খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যৌথভাবে একটি মামলা হয়। খাসোগির প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মামলাটি করেন চেঙ্গিস। মামলায় যুবরাজ ছাড়াও ২০ জনের বেশি সৌদি নাগরিককে বিবাদী করা হয়। মামলায় যুবরাজের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, খাসোগি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনকে সৌদির গণতান্ত্রিক সংস্কার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছেন, এমনটা জানতে পেরে যুবরাজ ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে চিরতরে নিশ্চুপ করিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দায়মুক্তি আছে কি না, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মতামত জানতে চেয়েছিলেন আদালত। বিষয়টি জানানোর জন্য ৩ অক্টোবর তারিখ ধার্য ছিল।
তবে যুবরাজকে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন সৌদির বাদশাহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তারা মতামত দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আরও সময় চায়। গতকাল আদালত সময় বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে বক্তব্য দাখিল করতে বলেছেন আদালত।