এক ভয়ানক রক্তক্ষয়ী দিনের সাক্ষী হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজার আল-আহলি আল-আরবি হাসপাতাল সহিংসতার শিকার হয়। এতে অন্তত ৫০০ ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
ঘটনার পর গাজা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসপাতালটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। ঘটনার জন্য তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আরেক সশস্ত্র সংগঠন প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদকে (পিআইজে) দায়ী করেছে।
ইসরায়েল বলছে, গোয়েন্দা তথ্যমতে, পিআইজের ছোড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালটিতে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে হামলায় প্রাণহানির যে সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
পিআইজের মুখপাত্র দাউদ শেহাব বলেছেন, হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি মিথ্যা, বানোয়াট। এসব কথা বলে দখলদার ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে ভয়ংকর অপরাধ, যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
হাসপাতালে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন আরব নেতারা। ইসরায়েল সফর শেষে জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল বাইডেনের। সেখানে আরব নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা ছিল।
হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘বিস্ফোরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ, গভীরভাবে মর্মাহত।
হাসপাতালে হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, সময় শেষ হয়ে গেছে! ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় তিনি হতভম্ব। হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে তিনি হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য বলেছে, হাসপাতালে কী ঘটেছে, তা খুঁজে বের করতে তারা মিত্রদের সঙ্গে কাজ করবে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, গাজার নিরীহ বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় যুক্তরাজ্য কাজ করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সব পক্ষের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। ডব্লিউএইচওপ্রধান তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন। প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, জীবনরক্ষাকারী সামগ্রীর সরবরাহ শুরুর জন্য তাদের অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় প্রবেশাধিকার দরকার।
হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। হাজারো বিক্ষোভকারী এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের নেতারা এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও হামলার নিন্দা জানিয়েছে।