অসম এই লড়াইয়ে হামাস হেরে যাবে জেনেও ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইহুদি বসতি স্থাপন বন্ধে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণসহ কয়েকটি লক্ষ্যে তারা এই ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু মাতৃভূমি উদ্ধারের সংগ্রামে ফিলিস্তিনিরা কতটা এগোতে পারছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
ইরানের নারী অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মাদি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। ঘটনাটি কাকতালীয়, তবে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের বর্তমান যুদ্ধে ইরানের ঐতিহাসিক উপস্থিতি আছে। চলতি যুদ্ধে কে জিতবে বা এর ফল কী হবে, সেটা দেখতে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে স্পষ্ট, এই যুদ্ধের যেকোনো পরিণতি ইরানের জন্য বিজয়সূচক হতে পারে।
৭ অক্টোবর সীমান্ত-প্রতিরক্ষা ভেদ করে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ার সময় গাজার গেরিলা দল যুদ্ধবিদ্যার অনেক চাতুর্য দেখিয়েছে। জল, স্থল ও আকাশপথে পুরো অভিযান ছিল দারুণভাবে সমন্বিত। তাদের ড্রোন ও নতুন জাতের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার এবং বাছাই করা ‘টার্গেট’ চটজলদি অপহরণ বলে দিচ্ছে, এটা কোনো হঠাৎ অভিযান নয়।
কেউ কেউ বলছেন, ইরান ও লেবাননের মিত্র হিজবুল্লাহর প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা ছাড়া এমন অভিযান চালানো হামাসের পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য ইরান ও হামাস উভয়ে অভিযানে তেহরানের সরাসরি সংযোগ অস্বীকার করেছে। তবে দুই পক্ষই সচরাচর তাদের সম্পর্ক ও যোগাযোগ লুকায় না।
৮ অক্টোবর বিবিসির ফারসি সার্ভিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের এক মুখপাত্র কাজী হামাদ বলেছেন, তাঁরা যে ইরানের সহযোগিতা পান, সেটা গর্বের বিষয়।
অন্যদিকে ইসরায়েল ও ওয়াশিংটন এখন জোরেশোরে দেখাতে চাইছে, ইরান হামাসের সর্বশেষ অভিযানে সরাসরি যুক্ত। এতে তাদের কিছুটা মুখরক্ষা হয়। তবে তাদের এমন কথাবার্তা হাস্যকর ও অযৌক্তিক।
যুক্তরাষ্ট্র যদি যুগের পর যুগ ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা দিতে পারে, তাহলে ফিলিস্তিনিরা কেন অন্য উৎস থেকে একই ধরনের সহযোগিতা নিতে পারবে না, সেটা বোঝা মুশকিল; বরং দীর্ঘ আন্তর্জাতিক অবরোধের পরও তেহরান যদি এভাবে হামাসকে সামরিকভাবে দক্ষ করে তুলতে পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ-কূটনীতির লজ্জা পাওয়া উচিত।
তবে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি উদ্ধারের সংগ্রামে ইরানের নিবিড় সমর্থন এই দুই পক্ষের কার কতটা লাভ হচ্ছে, সেটা নির্মোহ বিশ্লেষণের দাবি করে। ফিলিস্তিনিদের দুই বসতি পশ্চিম তীর ও গাজার বিরোধ ইরান-হামাস অন্তরঙ্গতার একটা পার্শ্বফল কি না, সেটাও গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। আন্তজাতি এই দূরত্ব বহুকাল ইসরায়েলকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
ইসরায়েলের সমরবিদেরা গত কয় দিনে বহুবার বলেছেন, কেবল আকাশ থেকে বোমা ফেলে নয়, স্থল অভিযান চালিয়েও গাজায় ধ্বংসলীলা চালানো হবে। তাঁদের এই হুমকিতে যথেষ্ট সারবত্তা আছে।
ইসরায়েল যেভাবে নানা ধরনের সৈনিক জড়ো করছে, তাতে বড়সড় অভিযানের শঙ্কা জোরালো হচ্ছে। শিগগিরই সেটা শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে গাজায় প্রায় ৯৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। এমন একটা সময়েও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা যে পুরোপুরি বিদ্রোহ করে বসেনি, সেটা নজর কাড়ছে অনেকের।
ফিলিস্তিনিদের মূল বসতি ২ হাজার ২০০ বর্গমাইলের পশ্চিম তীরে। প্রায় ৩৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষের বাস সেখানে। ইসরায়েলবিরোধী যেকোনো ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানকার ফাতাহ গেরিলা দলের সঙ্গে হামাসের আদর্শিক ও কৌশলগত ফারাক আছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যে ফোনে পশ্চিম তীরকে শান্ত রাখার অনুরোধ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র জানে, গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করলে পশ্চিম তীরের চুপচাপ অবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
যদিও সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক উপস্থিতি আছে। পুরো পশ্চিম তীরে রাজত্ব চলছে শত শত ইসরায়েলি চেকপোস্টের। গাজার মতো ওই অঞ্চলও খোলা আকাশের নিচে একটা কারাগার ছাড়া কিছু নয়। সেখানে বিদ্রোহের সুযোগ তৈরি করা গাজার চেয়েও কঠিন।
৭ অক্টোবর হামাসের সামরিক উদ্যোগ শুরুর আগে চলতি বছরের গত সাত-আট মাস গাজা ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত। ইসরায়েলি সৈনিক ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘাত বেশি হচ্ছিল পশ্চিম তীরে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ১৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নতুন বসতি স্থাপনকারীরা কয়েক শ বার ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করেছে। পশ্চিম তীর ও গাজার প্রতিরোধযোদ্ধারা একক নেতৃত্বের অধীনে এসব হামলা রুখতে পারছে না।
ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের একটা দুর্বল দিক এই নীরব বিভক্তি। এর পেছনে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বেশ ভূমিকা আছে। সবাই হামাসের মুরব্বি হিসেবে ইরানের কথা বললেও তুরস্ক এবং কাতারও একসময় ফাতাহের বিপরীতে হামাসকে মদদ দিয়েছে। এসব সমর্থনের জোরেই ২০০৭ সালে ফাতাহ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয় হামাস।
আবার মাহমুদ আব্বাসদের ফাতাহকে শক্তপোক্ত রাখতে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের যে চেষ্টা আছে, সেটাও সত্য। তবে এসব হিসাব-নিকাশ অতিক্রম করেই ৭ অক্টোবর গাজার বিদ্রোহের সমর্থনে পশ্চিম তীরে হরতাল পালিত হয়। এটা দেখেই হয়তো মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে প্রায় ২০ প্রতিরোধযোদ্ধা মারা গেছেন। এভাবে ধীরে ধীরে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলে গেলে সেটা ইরান ও হামাসের জন্য বড় এক ‘সাফল্য’ হবে।
ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশার পেছনে ইউরোপ-আমেরিকার ঐতিহাসিক দায় আছে। অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার টানাপোড়েনও অতি পুরোনো। ওই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে সম্প্রতি আফ্রিকায়ও ছড়িয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার সাহিল অঞ্চলে ফ্রান্সবিরোধী অভ্যুত্থানের যে ঢেউ চলছে, তাতে ইরানের উৎসাহ গোপন কিছু নয়।
ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সৈনিক-জনতার যে ঐক্য নাইজার ও মালিতে দেখা যাচ্ছে, তার পথ দেখিয়েছিল পাশের বুরকিনা ফাসো। গত মাসে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়া রৌউম্বা তেহরান সফর করেন। এ ঘটনার দুই মাস আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বিস্ময়কর এক সফরসূচিতে কেনিয়া, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে যান।
ওই ‘আফ্রিকা অভিযানে’র মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন, ইরানকে ‘একঘরে’ করা সহজ নয় এবং সম্ভবও হয়নি। সিরিয়ার ক্ষমতায় আসাদ বংশকে রক্ষা করেও একই বার্তা দিয়েছে তেহরান।
তবে হামাস যোদ্ধাদের ঝাঁকে ঝাঁকে ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে পড়া নিশ্চিতভাবে ইরানের দিক থেকে আরও বেশি ও বড় কোনো বার্তা। এটা ইসরায়েলের এত দিনের প্রতিরক্ষা মিথকে অনেকখানি ফুটো করে দিয়েছে। এই হামলার কথা আগেই টের না পাওয়ায় কেউ কেউ ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা বলছেন। ব্যাপারটা হয়তো সে রকম নয়। কারণ, এই যুদ্ধ ইরানের মতো ইসরায়েলের দক্ষিণপন্থীদের জন্যও আখেরে লাভজনক প্রমাণ হতে পারে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধাদের অতীত যেকোনো হামলার চেয়ে এবার ‘আল-আকসা ফ্লাডে’ তুলনামূলক বেশিসংখ্যক ইসরায়েলি হতাহত হয়েছে। হামাসের দিক থেকে পরিসংখ্যানটা বেশ গর্বভরে বলার মতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের ভারসাম্য ইসরায়েলের দিকে হেলে পড়তে বাধ্য। ইতিমধ্যে হয়েছেও তা–ই। এমনটা যে ঘটবে, সে–ও নিশ্চয়ই হামাসের অজানা ছিল না। তাহলে হামাস কেন এই প্রতিরোধযুদ্ধে নামল? সেটা কি ইরানের চাপে বা নির্দেশে? এসব প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে সবার মুখে মুখে।
তবে ইরানের নির্দেশে হামাসের যুদ্ধে নামার সম্ভাবনা কম। ইরানের সহায়তা পেয়ে থাকলেও হামাস ইরানের পুতুল সংগঠন নয়, কখনো ছিলও না। ঐতিহাসিকভাবে তারা ইরানের সৃষ্টিও নয়। হামাস ও হিজবুল্লাহর ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যে অনেক ফারাক আছে। ফিলিস্তিনি জমিনে হামাসের পাটাতন তৈরি করেছিল মিসরের সুন্নি ‘ব্রাদারহুড’, শিয়ারা নয়। এমন বিবেচনায় প্রশ্ন ওঠে, যদি ইরানের প্রভাবের বাইরে নিজেদের সিদ্ধান্তে যুদ্ধে নেমে থাকে, তাহলে হামাস কী অর্জন করতে চাইছে?
প্রথমত, হামাস ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের দিকে আবার বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে চেয়েছিল এবং সেটা ভালোভাবে ঘটেছে। দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার যে হিড়িক পড়েছে, সেটা থামানোও তাদের লক্ষ্য ছিল। তৃতীয়ত, এই অভিযানে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি বন্ধ করতে বিশ্ববাসীকে আহ্বানের একটা চেষ্টা আছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের দক্ষিণপন্থীরা জোরেশোরে ফিলিস্তিনিদের জমিতে স্থায়ী ইহুদি বসতি তৈরি করে যাচ্ছিল। এটাই পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে বেশি। সামরিক অভিযানে ইসরায়েলিদের বন্দীর সংখ্যা বাড়িয়ে হামাস এখন বেশ কিছু বিষয়ে দর-কষাকষিতে আসতে চাইছে।
ফিলিস্তিনের ইতিহাসে তারা ‘বীরত্বে’র একটা নতুন পাতাও যুক্ত করেছে। যেকোনো গেরিলা দলের এ রকম লক্ষ্য থাকে।
হামাস যোদ্ধাদের হামলা থেকে ইহুদি দক্ষিণপন্থীরাও অনেক ধরনের ফায়দা তুলতে শুরু করেছে। তারা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাইছে, গাজাসহ ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট এলাকাগুলোতে তাদের এত দিনের দমনপীড়ন ন্যায্য। নিজেদের যুদ্ধাপরাধ তারা হামাসের অভিযান দিয়ে মুছে ফেলতে চায়। একই সুযোগে পুরোনো ফিলিস্তিনি মানচিত্রের অবশিষ্ট ছিটেফোঁটা এলাকাও স্থায়ীভাবে দখলে নিতে এখন উদ্ধত তেল আবিব।
হামাসের নতুন যুদ্ধশক্তিকে বিশাল বিপদ দেখিয়ে ইসরায়েলি প্রশাসনের যুদ্ধবাজ অংশ দেশটিকে নতুন করে সামরিকায়নের পথেও টেনে নিচ্ছে। দেশটির যারা বহুকাল ধরে ফিলিস্তিনি সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছিল, সেই মধ্যপন্থী শক্তিকেও দক্ষিণপন্থীরা কোণঠাসা করে ফেলবে।
ইতিমধ্যে ‘যুদ্ধ সামনে রেখে জাতীয় সরকার’-এর প্রস্তাব তুলেছে তারা। নেতানিয়াহুর জন্য এটা বেশ সুখকর। ইউরোপের যেসব শক্তি এত দিন ইসরায়েলের সমরবাদী ফিলিস্তিন নীতিকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে দোটানায় ছিল, এখন তাদেরও পাশে পেয়ে গেছে তেল আবিব।
হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ায় জনগণের জবাবদিহির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে। বিগত ৫০ বছরে তারা ফিলিস্তিনিদের তরফে এমন নাটকীয় পাল্টাহামলার শিকার হয়নি। সীমান্ত রক্ষায় ব্যর্থতার দায় নেতানিয়াহু প্রশাসনের ওপরই পড়ে।
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনও চলছে বহুদিন ধরে। এসব এড়াতে তিনি ও তাঁর ওয়াশিংটনের মিত্ররা বর্তমান পরিস্থিতিকে একটা সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে নিয়ে ইরানকেও তাতে জড়াতে বেশ আগ্রহী। তাদের ইরানবিরোধী কৌশল আবার ওই দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শাসকদের আরও কঠোর নীতি অনুসরণকে সহজ করে দেবে। অর্থাৎ ইসরায়েলের চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তন ইরানের ভেতরও একই ধরনের পরিবর্তনের জ্বালানি জোগাচ্ছে।
ইরানের শাসকেরা বিদেশনীতির বেলায়ও হামাসের অভিযান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে লাভবান। নার্গিস মোহাম্মাদির শান্তি পুরস্কার ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু সময় যে হইচই তুলত, আপাতত তার আর কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ যেসব আরব দেশ ইসরায়েলকে বন্ধু বানাতে দ্রুত এগোচ্ছিল, তাদের সেই উদ্যোগ আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। সৌদি আরবকে আপাতত পাশে পাচ্ছে না, এটা ইসরায়েলের জন্য বড় ক্ষতি। ২০২০ সালে আরব আমিরাতকে পাশে টানতে পারলেও সৌদি আরবকে পোষ মানাতে পারার বাড়তি অর্থ দাঁড়াত মুসলমান বিশ্বে। প্রভাবশালী এই দেশ ইসরায়েলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া মাত্র অন্য সব মুসলমানপ্রধান দেশের শাসকেরা তাকে সনদপত্র আকারে হাজির করে নিজেরাও তেল আবিবের ঘনিষ্ঠ হতেন।
হামাসের অভিযানের পর লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নসরুল্লাহ খোলামেলাভাবেই এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘যারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে চায়, তাদের জন্য এই হামলা সতর্কসংকেত।’ সুতরাং মধ্যপ্রাচ্যে এ যুদ্ধে পরোক্ষে ইরানের নেতৃত্বই সবল হলো। ইতিমধ্যে তারা ইয়েমেন যুদ্ধেও সৌদি আরবকে রক্ষণাত্মক অবস্থানে ঠেলে দিতে পেরেছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননে ইরানের প্রভাবের পরিসর গাজার হামাস যোদ্ধাদের অভিযান ‘আল-আকসা ফ্লাড’ নিঃসন্দেহে বেশ বাড়াল। কিন্তু তাতে ফিলিস্তিনিরা মাতৃভূমি উদ্ধারের সংগ্রামে কতটা এগোতে পারছে, সে হিসাব স্পষ্ট নয়।
আলতাফ পারভেজ গবেষক