লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের কাছে থাকা পেজার (তারহীন যোগাযোগযন্ত্র) বিস্ফোরণের ঘটনার পর বেশ কিছু ছবি সামনে এসেছে। এসব পেজার কারা তৈরি করছে, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এর মধ্যে নাম এসেছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান, হাঙ্গেরি ও জাপানের একটি কোম্পানির নাম।
পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে লেবাননের নিরাপত্তা সংস্থা। লেবাননের একটি জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, হিজবুল্লাহর কেনা পাঁচ হাজার পেজারের (যোগাযোগের যন্ত্র) ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। গত মঙ্গলবার লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার মাস কয়েক আগেই এ কাজ করে তারা।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, গোয়েন্দারা সম্ভবত হিজবুল্লাহর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগে পেজারগুলোতে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। লেবাননের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, পেজারগুলো নেওয়ার জন্য হিজবুল্লাহকে বিশেষ প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। নাশকতার উদ্দেশ্যে এগুলো হিজবুল্লাহর কাছে পৌঁছানো হয়। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলাকে বুবি–ট্র্যাপ বলা হয়।
নাম প্রকাশ না করে লেবাননের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরও বলেন, তথ্যে দেখা গেছে, এসব যন্ত্র আগে বিস্ফোরণের জন্য প্রোগ্রাম ঠিক করে রাখা ছিল। ব্যাটারির পাশে বিস্ফোরক উপাদান বসানো ছিল।
হিজবুল্লাহর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, এসব পেজার সম্প্রতি আমদানি করা হয়েছিল এবং এগুলোর উৎস থেকে নাশকতা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পেজার তৈরি করেছিল তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি গোল্ড অ্যাপোলো বলেছে, হামলায় ব্যবহৃত পেজারগুলো তারা তৈরি করেনি।
এগুলো হাঙ্গেরির বুদাপেস্টভিত্তিক একটি কোম্পানি তৈরি করেছে। অ্যাপোলো গোল্ডের লাইসেন্স ব্যবহারের অনুমতি আছে কোম্পানিটির।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু বলেছেন, তাইওয়ান সরকার খুব কাছ থেকে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, পেজার বিস্ফোরণের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ঘটনার ওপর খুব ভালোভাবে নজর রাখছে।
তাইওয়ানের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে দুই দেশের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক আছে।
বুদাপেস্টের একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, বুদাপেস্টের কোম্পানিটি বাণিজ্যের মধ্যস্থতাকারী। হাঙ্গেরিতে তাদের কোনো উত্পাদন কারখানা নেই।
এদিকে যে পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে, সেগুলোর মডেলে জাপানের প্রতিষ্ঠান আইকমের লোগো দেখা গেছে। এ বিষয়ে আইকম জানিয়েছে, লেবাননে যে পেজার বিস্ফোরণ ঘটেছে, ওই ধরনের মডেল ১০ বছর আগেই তৈরি করা বন্ধ করেছে তারা। তাই হিজবুল্লাহর কাছে যাওয়া যন্ত্রগুলো তাদের কি না, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
আজ আইকমের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণমাধ্যমে যেসব তথ্য এসেছে, তার তদন্ত করা হচ্ছে। ওসাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশি বাজারের জন্য তাদের পণ্য কেবল অনুমোদিত পরিবেশকদের মাধ্যমে বিক্রি হয়। জাপানের নিরাপত্তা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ প্রবিধান অনুযায়ী রপ্তানি পরীক্ষা করে তবে তা ছাড়া হয়।
তবে এর আগে আইকম সতর্ক করে বলেছিল, তাদের নামে ভুয়া পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। বিশেষ করে যেসব পণ্য তারা আর বাজারজাত করে না, এমন ভুয়া পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছে, প্রায় পাঁচ মাস আগে হিজবুল্লাহ সহজে বহনযোগ্য রেডিও যন্ত্রগুলো কিনেছিল। একই সময় তারা পেজারগুলো কেনে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি গোয়েন্দারা দূর থেকে এসব যন্ত্রে বিস্ফোরণ ঘটান। এতে পাঁচ হাজার পেজার একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। এরপর দ্বিতীয় দফার আরেক হামলার ঘটনাও ঘটে। এ সময় ওয়াকি–টকি, ল্যাপটপ, ওয়াকি–টকি রেডিও, গাড়ির বিস্ফোরণের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত ও ৪৫০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর লেবাননে সন্দেহভাজন যন্ত্রগুলো ধ্বংস করতে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া দেশটির ফ্লাইটে ওয়াকি–টকিসহ পেজার বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।