জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

লেবানন আরেক গাজা হলে বিশ্ববাসী নিতে পারবে না: গুতেরেস

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে বাড়তে থাকা সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, লেবানন আরেক গাজায় পরিণত হলে বিশ্ববাসী তা নিতে পারবে না।

গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবানন ও ইসরায়েল সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলছে। হিজবুল্লাহ লেবানন থেকে রকেট ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। জবাবে ইসরায়েলি সেনারা কামানের গোলা নিক্ষেপ এবং বিমান হামলা চালাচ্ছে। হামলায় উভয় পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজারো মানুষ।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, উভয় পক্ষ যেভাবে পাল্টাপাল্টি হুমকি দিচ্ছে, তাতে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

গুতেরেস বলেন, ‘একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ, একটি ভুল-বোঝাবুঝি মারাত্মক বিপর্যয় নামিয়ে আনতে পারে; যেটি সীমান্ত ছাড়িয়ে আরও বহুদূর ছড়িয়ে পড়তে পারে। খোলাখুলি বললে, আমাদের কল্পনারও বাইরে। তাই স্পষ্ট করেই বলি, এই অঞ্চলের বাসিন্দা এবং পুরো পৃথিবীর মানুষ লেবাননের আরেকটি গাজায় পরিণত হওয়ার ধকল নিতে পারবে না।’

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউএনআইএফআইএল) এবং ইউএনটিএসও নামে পরিচিত একটি নিরস্ত্র কৌশলগত পর্যবেক্ষক দল দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ লেবাননে অবস্থান করে ‘ব্লু লাইন’ নামে পরিচিত লেবানন ও ইসরায়েল সীমান্তজুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা উত্তেজনা হ্রাসে সেখানে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন জানিয়ে গুতেরেস আরও বলেন, ‘বিশ্বকে অবশ্যই জোর গলায় এবং স্পষ্ট করে বলতে হবে: দ্রুত উত্তেজনা হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে, এটা খুব জরুরি। সেখানে সামরিকভাবে সমাধানের কিছু নেই।’

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বিরোধ এবং নিয়মিত না হলেও পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। ২০০৬ সালে উভয় পক্ষ একটি সর্বাত্মক যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েছিল। ৩৪ দিন ধরে যে যুদ্ধ চলে।

হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ গত বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি লেবাননে বড় কোনো হামলা চালায়, তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামবে হিজবুল্লাহ। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হবে না। কোনো ধরনের সংযমও দেখাবে না তারা।

এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ‘বৈরুতকে গাজায় পরিণত করার’ হুমকি দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি হুমকির মাধ্যমে পরস্পরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, নাকি সত্যিকার অর্থেই তারা পুরোদমে যুদ্ধে জড়াবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

গাজায় ইসরায়েলের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহর তুলনা করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হাসান বারারি আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের তুলনায় হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ও সুসংগঠিত। তাদের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্রের সংখ্যাও বেশি। এ জন্য আমার মনে হয়, [যুদ্ধ হলে] ইসরায়েলকে অনেক বড় মূল্য চুকাতে হবে, যা তারা চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারে।’