ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা বন্ধ হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীতকালীন বৃষ্টি। ভারী বৃষ্টিতে ভেসে গেছে অনেক অস্থায়ী তাঁবু। এসব তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুহারা গাজাবাসী। জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থা বলছে, একদিকে চলছে হামলা, অন্যদিকে বৃষ্টি; দুর্দশা এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে গাজা যেন ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলের টানা হামলায় গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। উপত্যকাজুড়ে দেখা দিয়েছে খাবারের তীব্র সংকট। ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন বিদ্যালয়, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাঁবু গেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারী বৃষ্টিতে প্লাস্টিকের তৈরি সেসব তাঁবুর অনেকগুলো ভেসে গেছে। শরণার্থীশিবিরগুলোর অনেক জায়গায় পানি জমেছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ঘর হারিয়ে মধ্য গাজার একটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন আমেন এদওয়ান। সেখানে তাঁর মতো আরও হাজারো মানুষ মাথা গোঁজার জায়গা খুঁজে নিয়েছেন। আমেন জানান, বৃষ্টিতে পরিবারের সদস্যেরা কেউ ঘুমাতে পারছেন না।
সংবাদমাধ্যমকে আমেন বলেন, ‘তাঁবুর ভেতরে ও চারপাশে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। আমরা কেউ ঘুমাতে পারছি না। আমরা নাইলনের তাঁবু খোঁজার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। এখন পাথর ও বালু দিয়ে শুকনা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
একই দৃশ্য দেখা গেছে রাফাহর শিবিরগুলোতেও। অনেকে তাঁবুর ভেতরে ও চারপাশে আবর্জনা ও বালু ফেলে বৃষ্টির পানির স্রোত আটকানোর চেষ্টা করছেন। ভেজা কাপড় শুকাতে দিয়েছেন অনেকেই। কিছু পরিবারের তাঁবু ঠিক আছে। কিন্তু অনেকেরই অবস্থা বেগতিক। অনেকেরই তাঁবুর মেঝেতে বিছানোর মতো কিছু নেই। তাঁদের ভেজা বালুর ওপরই রাত কাটাতে হচ্ছে।
প্লাইউড আর পাতলা প্লাস্টিক দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই বানানোর চেষ্টা করছিলেন মধ্যবয়সী রমজান মোহাদাদ। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির পানি যাতে না ঢোকে, সে জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এই পাতলা প্লাস্টিক আমাদের বাঁচাতে পারেনি।’
আল–জাজিরার সাংবাদিকের শেয়ার করা একটি ভিডিও ফুটেজে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে এক কিশোরকে হাঁটুসমান নোংরা পানিতে হাঁটতে দেখা যায়।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনেভায় জাতিসংঘের বৈশ্বিক শরণার্থীবিষয়ক ফোরামের বৈঠকে বলেছেন, গাজা এখন পৃথিবীর বুকে একটি ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি তৃতীয়বারের মতো ফিলিস্তিন ঘুরে এসে ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনের মানুষেরা ১৯৪৮ সালের পর তাঁদের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক এক ইতিহাস।
এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। কোনো কিছুতেই ইসরায়েলকে থামানো যাবে না। গতকাল বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে একের পর এক ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৮ হাজার ৪০০–এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।