গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলে প্রায়ই বিক্ষোভসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলে প্রায়ই বিক্ষোভসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে তেল আবিবে ফিলিস্তিনি ও ইহুদিদের বিরল শান্তিমিছিল

‘শান্তিকে হ্যাঁ বলুন, চুক্তিকে হ্যাঁ বলুন’। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের তেল আবিবে এক বিরল শান্তিমিছিলে শত শত ফিলিস্তিনি ও ইহুদির কণ্ঠে এমন স্লোগান শোনা যায়। তাঁরা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও সহিংসতার চক্র বন্ধের দাবি জানান।

গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধসহ উপত্যকাটি থেকে জিম্মিদের ফেরত আনার দাবিতে তেল আবিবে প্রায়ই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এসব বিক্ষোভে কখনো জিম্মিদের স্বজনেরা অংশ নিচ্ছেন, আবার কখনো সরকারবিরোধী ইসরায়েলিরা অংশ নিচ্ছেন। কখনো কখনো আরব-ইহুদি শান্তি শিবিরের আয়োজনে বিক্ষোভ হচ্ছে।

ইসরায়েলে ৯৫ লাখ মানুষ বাস করে। এর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ আরব জাতিগোষ্ঠীভুক্ত, যাদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনি।

অধিকারকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের তথ্যমতে, ইসরায়েলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধবিরোধী কর্মসূচির অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয়। অনুমতি না পাওয়ায় এক সপ্তাহ স্থগিত রাখার পর গতকাল শান্তিমিছিলটির আয়োজন করা হয়।

শান্তিমিছিলে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা আপাতত ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চাইছেন। তবে তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন।

শান্তিশিবির সম্পর্কে ইসরায়েলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি আমিরা মোহাম্মদ বলেন, শান্তি স্থাপনের আন্দোলন মূলত গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে থেমে গেছে। তখন থেকে শান্তি আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের চেয়ে কট্টরপন্থী ব্যক্তিদের আওয়াজ বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে। প্রত্যাশিত শান্তির জন্য এখন তাঁদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

৪৯ বছর বয়সী শিক্ষক কারমিট বার লেভি বলেন, আরও বেশি সহিংসতা দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি ও ইহুদি—উভয়ের জন্য একটি সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে হবে। স্বীকার করতে হবে যে তাঁদেরও এখানে বসবাস করার সম–অধিকার আছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ৬৪ বছর বয়সী মার্সেলো ওলিকি বলেন, শান্তিই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। সীমান্তের ঠিক ওপারে নবজাতক, শিশু, নারীরা মারা যাচ্ছেন। সেখানে এমন মানুষ আছেন, যাঁরা তাঁর মতোই শোকাহত। তাঁরাও তাঁর মতো শান্তি চান।

তেল আবিবে বিক্ষোভকারী পক্ষগুলো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থাকলেও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে তাঁরা একমত।

অধিকার সংগঠন ‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’ গতকাল তেল আবিবে শান্তিমিছিলের আয়োজন করে। সংগঠনটির সহপরিচালক রুলা দাউদ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন সমবেত লোকজনের হাতে ‘এখন শান্তি চাই’, ‘যুদ্ধে কোনো বিজয়ী নেই’ লেখা ব্যানার-পোস্টার দেখা যায়।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েল সরকারের হিসাব অনুসারে এএফপি বলছে, হামলায় ১ হাজার ১৯৭ জন নিহত হয়েছেন। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।