ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার প্রশংসা করেছিলেন হিজবুল্লাহপ্রধান শেখ হাসান নাসরাল্লাহ। হিজবুল্লাহ লেবাননের ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী। হামাস–ইসরায়েলের সংঘাতের পর থেকে প্রায়ই ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা চালাচ্ছে গোষ্ঠীটি।
সামরিক শক্তির দিক দিয়ে হিজবুল্লাহ বেশ শক্তিশালী। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষিত যোদ্ধাও রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ২০০৬ সালে যুদ্ধে জড়িয়েছিল হিজবুল্লাহ। এখন প্রশ্ন উঠেছে, গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা কতটুকু?
লেবাননের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে হিজবুল্লাহর। দেশটিতে সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে তাদের। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে গত শতকের আশির দশকে হিজবুল্লাহ গড়ে তোলে ইরান।
ওই সময়ে লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল, দেশটির দক্ষিণাঞ্চল দখল করে রেখেছিল ইসরায়েল। লেবাননে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বাহিনীর ওপর বিভিন্ন সময়ে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। ২০০০ সালে লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল। এর কৃতিত্ব নেয় হিজবুল্লাহ।
সেই সময় থেকেই দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর হাজার হাজার যোদ্ধা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের বড় ভান্ডার রয়েছে। লেবানন–ইসরায়েল সীমান্তে বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোয় ইসরায়েলের উপস্থিতির বিরোধিতা করে আসছে গোষ্ঠীটি।
পশ্চিমা দেশগুলোসহ উপসাগরীয় আরব দেশ, আরব লিগ ও ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন তকমা দিয়েছে। ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে তুমুল লড়াই হয় হিজবুল্লাহর। সে সময় ইসরায়েলের ভেতরেও ঢুকে পড়েছিলেন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা।
হিজবুল্লাহকে নির্মূল করতে বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এরপরও টিকে আছে তারা। বরং দিন দিন যোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি এই গোষ্ঠী হাতে পেয়েছে নতুন ও শক্তিশালী সব অস্ত্র।
হাসান নাসরাল্লাহ শিয়া ধর্মপ্রচারক। ১৯৯২ সাল থেকে হিজবুল্লাহর নেতৃত্বে আছেন তিনি। গোষ্ঠীটিকে একটি সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে হাসান নাসরাল্লাহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের শুরু ১৯৮১ সালে। সে বছর খামেনিকে ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে লেবাননে নিয়োগ দিয়েছিলেন ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি।
তবে বহু বছর ধরে জনসমক্ষে আসেন না নাসরাল্লাহ। ধারণা করা হয়, ইসরায়েলের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার ভয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে আছেন তিনি। তবে হিজবুল্লাহর সদস্যদের কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। প্রতি সপ্তাহে টেলিভিশনে তাঁর ভাষণ সম্প্রচারিত হয়।
রাষ্ট্রীয় নয়, এমন সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটিকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে পাশে রয়েছে ইরান। হাসান নাসরাল্লাহর দাবি, হিজবুল্লাহর ১ লাখ যোদ্ধা রয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, গোষ্ঠীটির ২০ থেকে ৫০ হাজার সদস্য রয়েছেন।
হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের অনেকে সুপ্রশিক্ষিত এবং তাঁদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁরা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ধারণা, হিজবুল্লাহর কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
হিজবুল্লাহর বেশির ভাগ অস্ত্রই হলো ছোট আকারের ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট। এগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে না। এ ছাড়া তাদের হাতে বিমানবিধ্বংসী ও জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম—এমন গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে হিজবুল্লাহর। ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে যেসব রকেট ছুড়েছিল, তার চেয়ে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অনেক উন্নত।
৭ অক্টোবরের পর থেকে উত্তর ইসরায়েলে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। রকেট, ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
এর জবাবে লেবাননের ভূখণ্ডে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল বাহিনী। ট্যাংক ও কামান থেকে গোলাও ছোড়া হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি এসব হামলায় ইসরায়েলি সেনা ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা নিহত হয়েছেন। সংঘাতের আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, দেশটির উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী ‘অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে’ রয়েছে।