ইসরায়েলি হামলায় ধসে পড়া ভবনে মাকে খুঁজতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন সামার আল-ব্রেইম ও সাহার আল-ব্রেইম। খান ইউনিস, গাজা উপত্যকা, ফিলিস্তিন, ৩ জুন
ইসরায়েলি হামলায় ধসে পড়া ভবনে মাকে খুঁজতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন সামার আল-ব্রেইম ও সাহার আল-ব্রেইম। খান ইউনিস, গাজা উপত্যকা, ফিলিস্তিন, ৩ জুন

যেখানে সারা দিন না খেয়ে থাকে শিশুরা, ৫ লাখ মানুষের টয়লেট ১২১টি

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে গৃহহীন হওয়া ফিলিস্তিনিরা মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছেন। সেখানে শিশুরা কখনো কখনো সারা দিন না খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার একটি টয়লেট ব্যবহার করছেন হাজারো মানুষ। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন অক্সফাম গতকাল মঙ্গলবার সতর্ক করে এ কথা জানিয়েছে।

সম্প্রতি গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এতে গাজার অন্যান্য স্থান থেকে পালিয়ে এসে যাঁরা এত দিন এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন এখান থেকে পালানো শুরু করেছেন।  জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর তথ্য অনুযায়ী, রাফা থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছেন।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অক্সফাম বলেছে, রাফায় গত ৬ মে স্থল অভিযান শুরু করার পর দিনে গড়ে মাত্র আটটি ত্রাণবাহী ট্রাক সেখানে ঢুকেছে।

অক্সফাম বলছে, গাজার অধিবাসীদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অবরুদ্ধ এ উপত্যকার আনুমানিক এক-পঞ্চমাংশের কম জায়গার মধ্যে গাদাগাদি করে থাকছে।

সংগঠনটি আরও বলেছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে পলায়নপর লোকজনকে পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেওয়া সত্ত্বেও গাজার বেশির ভাগ স্থানই মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। দুর্ভিক্ষও দুয়ারে কড়া নাড়ছে।

অক্সফামের তথ্য, গত মে মাসে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার চালানো জরিপে দেখা গেছে, এই জরিপের আগে গাজার ৮৫ শতাংশ শিশু প্রতি তিন দিনে অন্তত একদিন সারা দিন না খেয়ে কাটিয়েছে।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অক্সফাম বলেছে, রাফায় গত ৬ মে স্থল অভিযান শুরু করার পর দিনে গড়ে মাত্র আটটি ত্রাণবাহী ট্রাক সেখানে ঢুকেছে।

এখানে (রাফায়) বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষকে সাগরের পানির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
মিরা, অক্সফামের কর্মী

অক্সফামের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক স্যালি আবি খলিল বলেন, ‘যখন দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হবে, তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।’

গত সপ্তাহে ফ্রেঞ্চ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার লোকজন ক্ষুধার শিকার হওয়ার অভিযোগ নাকচ করে দেন। তিনি দাবি করেন, দুর্ভিক্ষ এড়াতে সবকিছু করা হয়েছে।

৪ হাজার মানুষের একটি টয়লেট

এদিকে দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় আল-মাওয়াসির মতো কিছু এলাকা ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অথচ সেখানে পানি সরবরাহ বা স্যানিটেশন সেবা নেই বললেই চলে।

অক্সফাম বলেছে, ‘আল-মাওয়াসিতে মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেখানে ৫ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ১২১টি টয়লেট। অর্থাৎ একটি টয়লেট ব্যবহার করছেন গড়ে ৪ হাজার ১৩০ জন।’

আল-মাওয়াসিতে কাজ করা অক্সফামের কর্মী মিরা গত অক্টোবরে ইসরায়েল গাজা যুদ্ধ শুরু করার পর সাতবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রাফা পরিস্থিতিকে অসহনীয় বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। বলেন, ‘এখানে বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষকে সাগরের পানির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।’

গত ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তাদের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন সাড়ে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।