শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আগুনে পুড়ে গেছে সবকিছু। আর এই ধ্বংসস্তূপে ফিলিস্তিনি শিশুরা কিছু খাবার পাওয়া যায় কি না তা খুঁজে দেখছে। গতকাল দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে
শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আগুনে পুড়ে গেছে সবকিছু। আর এই ধ্বংসস্তূপে ফিলিস্তিনি শিশুরা কিছু খাবার পাওয়া যায় কি না তা খুঁজে দেখছে। গতকাল দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে

গাজায় আগ্রাসন

শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ

রাফায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত আশ্রয়শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ফিলিস্তিনের গাজার রাফায় একটি শরণার্থীশিবিরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাল আস-সুলতান এলাকায় তাঁবু দিয়ে গড়ে তোলা ওই শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। এদিকে সাত মাস ধরে চলা গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে।

গত রোববার দিবাগত রাতে গাজার সর্ব দক্ষিণের রাফায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত ওই আশ্রয়শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। হামলার পর শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন ধরে যায়। এতে জীবন্ত পুড়ে মারা যান অনেকে। শিশুদের মরদেহগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে যায়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার জানিয়েছে, শরণার্থীশিবির হামলার ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৩ জন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৪৯ জন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য সেখানকার হাসপাতালগুলোর নেই।

এদিকে গাজায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৩৬ হাজার ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮১ হাজার ২৬ জন।

নিন্দার ঝড়

রাফার শরণার্থীদের তাঁবুতে চালানো ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বাধ্যতামূলক আদেশ মেনে অবিলম্বে রাফায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৈশ্বিক সম্প্রদায়।

তাল আস-সুলতানে ইসরায়েলি হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াফাকে তিনি বলেন, এ হামলা ইসরায়েলের ‘সীমা অতিক্রমকারী হত্যাযজ্ঞ’।

  • গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে।

  • আইসিজের আদেশ মেনে রাফায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান।

রাফার শরণার্থীশিবিরে হামলার ঘটনাকে হত্যাযজ্ঞ আখ্যা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি এ হামলার ঘটনায় ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ‘সামর্থ্যের মধ্যে সবকিছু’ করার অঙ্গীকার করেছেন।

শরণার্থীশিবিরে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেন, ‘এ অভিযান বন্ধ করতে হবে। রাফায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, রাফায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে অবশ্যই আইসিজের আদেশ মেনে চলতে হবে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেছেন, আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে।

রাফায় শরণার্থীদের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবও। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের চালানো অব্যাহত হামলার সর্বশেষ এটি।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কৌঁসুলি মেজর জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলার ঘটনাকে ‘খুবই গুরুতর’ বলে মন্তব্য করেছেন। সশস্ত্র বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি।

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় নিয়ে আজ মঙ্গলবার মিসরের কায়রোয় নতুন করে আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে। তবে এ আলোচনার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার বলেছে, রাফায় ইসরায়েলি হামলা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

চীন সফরে আরব নেতারা

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও তিউনিসিয়ার নেতারা চীন সফরে যাচ্ছেন। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং এক বিবৃতিতে বলেন, এই নেতারা ২৮ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত চীন সফর করবেন। তাঁরা ‘চায়না-আরব স্টেটস কো-অপারেশন ফোরাম’–এর ১০ম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।