গাজায় সামরিক তৎপরতাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে কি না, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সে সিদ্ধান্ত দেবেন। আজ শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। আইসিজের এই আদেশ বিশ্বজুড়ে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। আইসিজে বলেছেন, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলায় শুক্রবারের এ রায় হবে যুগান্তকারী।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজায় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। আজকের রায়ে আইসিজে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীকে দ্রুত সামরিক তৎপরতা বন্ধের আদেশ দিতে পারেন। ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে কি না, সে প্রশ্নের সুরাহা আজ করবেন না আইসিজে। শুধু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। গণহত্যা বিষয়ে রায় দিতে আরও সময় লাগবে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজের দেওয়া আদেশ দেশটির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা গত ডিসেম্বরে আইসিজেতে মামলাটি করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে দুই দিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন। জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ ঘোষণা করা জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয়।
গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ৯টি আরজি জানিয়েছে। গাজায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ স্বাভাবিক রাখতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইসরায়েল প্রায়ই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ও জাতিসংঘের তদন্ত বর্জন করে থাকে। তাদের দাবি, এগুলো পক্ষপাতদুষ্ট। তবে চলতি মাসের শুরুতে আইসিজেতে অনুষ্ঠিত দুই দিনের শুনানিতে দেশটি একটি উচ্চপর্যায়ের আইনি দল পাঠিয়েছিল।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আইসিজে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত এই আদালত দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। আইসিজের দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানার জন্য কোনো দেশের ওপর খুব কম শক্তিই খাটাতে পারেন এই আদালত। আইসিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আইসিজের আদেশ তিনি মানার বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন না। এর আগে ১৪ জানুয়ারি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না—দ্য হেগ নয়, শয়তানের অক্ষ নয়, অন্য কেউ নয়।’
‘দ্য হেগ’ বলতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কথা বুঝিয়েছেন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোটকে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ বলে ডাকা হয়। যাকে ‘শয়তানের অক্ষ’ বলেছেন নেতানিয়াহু।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের অনেক মিত্র বহুল আলোচিত ‘দুই রাষ্ট্রভিত্তিক’ সমাধানের কৌশলের কথা বলছে। এর অর্থ ভবিষ্যতে ইসরায়েলের পাশে পৃথক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে টেকসই শান্তি বজায় রাখা। এ নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটন কূটনৈতিক চাপ দিচ্ছে। মার্কিন সিনেটে বাইডেনের দুই রাষ্ট্রীয় সমাধান নীতির বিষয়ে অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থন দেওয়ায় এ চাপ আরও বাড়তে পারে। বুধবার সিনেট ডেমোক্রেটিক ককাসে ৫১ সদস্যের মধ্যে ৪৯ জন বাইডেনের এই নীতির প্রতি সমর্থন দেন।
গাজার খান ইউনিস শহরে বুধবার থেকে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলে। সেখানে থাকা জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে গতকাল কেনিয়ার নাইরোবিসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।