গাজায় ছোট ছোট স্থল অভিযানের পেছনে যেসব কৌশল ইসরায়েলের

ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গাজায় রাতভর ট্যাংক নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে
ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বুধবার রাতভর ট্যাংক নিয়ে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলের বাহিনী। স্বল্প সময়ের এসব অভিযান শেষে আবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ফিরে গেছে দেশটির সেনারা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, উপত্যকাটিতে সর্বাত্মক স্থল হামলা শুরুর আগে এসব অভিযানের পেছনে কিছু কৌশল রয়েছে ইসরায়েলের। ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনীও একই কাজ করেছিল।

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় অবিরাম বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই উপত্যকাটিতে সর্বাত্মক স্থল হামলা শুরু করতে সীমান্তজুড়ে ট্যাংকসহ ইসরায়েলি সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল রাতে গাজার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। কয়েক দিন আগেও গাজায় ঢুকেছিল তারা।

ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের সংঘাত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক এলিজাহ ম্যাগনিয়ার আল–জাজিরাকে বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে রাতভর অভিযানের পেছনে ইসরায়েলের যেসব কৌশল রয়েছে, তার একটি হলো ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ‘প্রস্তুতি ও সক্ষমতা’ যাচাই করে দেখা।

স্বল্প সময় অভিযান পরিচালনার এই কৌশল ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য নতুন বলে উল্লেখ করেছেন এলিজাহ ম্যাগনিয়ার। তিনি বলেন, ‘অভিযান শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি বাহিনী ফিরে যাচ্ছে। সচরাচর অভিযান চালানোর স্থানে কিছু সময় অবস্থান করে তারা।’

এই সাংবাদিক বলেন, ‘একই কাজ ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী করেছিল—দ্রুত কোথাও হামলা চালানো ও ফিরে আসা। আর এর মাধ্যমে দেখা যে তারা কতটা শত্রুর পাল্টা হামলার মুখে পড়ে। এভাবে কোনো এলাকায় বড় পরিসরে হামলা চালানোর আগে ওই এলাকার বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট হামলা চালানো হতো।’

বিরোধী পক্ষের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি থাকলে এমন অভিযান চালানো হয় বলে মনে করেন এলিজাহ ম্যাগনিয়ার। তাঁর কথায়, ‘ইসরায়েলি বাহিনী জানে (গাজায়) তাদের জন্য হামাস ও ইসলামিক জিহাদের হাজার হাজার যোদ্ধা অপেক্ষা করছেন। তবে তাঁদের প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসরায়েলের হাতে যথেষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই।’

এলিজাহ ম্যাগনিয়ার বলেন, এসব অভিযানের একটি মনস্তাত্ত্বিক দিকও আছে। গাজায় পুরোদস্তুর স্থল অভিযান শুরু করতে নিজ দেশের ভেতরে যে চাপ রয়েছে, তা সামাল দিতে হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীকে। ছোট ছোট অভিযানের মাধ্যমে তারা দেখাতে চাইছে, কোনো না কোনোভাবে তারা গাজায় প্রবেশ করছে। এ ছাড়া গাজার মতো তুমুল প্রতিকূল পরিবেশে বড় পরিসরে হামলা চালানোর জন্য এভাবে নিজেদের মনোবল বাড়িয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলের সেনারা। কারণ, আজ অথবা কাল, গাজায় তাদের বড় হামলার জন্য ঢুকতেই হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিমত, চাপে ইসরায়েল

এদিকে কাতার ইউনিভার্সিটির গাল্ফ স্টাডিজ সেন্টারের মাহজুব জয়েইরির মতে, হামাসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ ইসরায়েলের নানা কৌশল ঘিরে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে গাজায় সর্বাত্মক স্থল হামলা শুরুর সময় এবং হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তির মতো বিষয়গুলো।  

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বর্তমানে হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদে মুক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক সম্পদ রক্ষায় এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনের দিকে নজর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। অপর দিকে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ গাজায় স্থল হামলা শুরু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সায় পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।

আল–জাজিরাকে মাহজুব জয়েইরি বলেন, গাজায় বড় পরিসরে স্থল হামলা দেরিতে শুরুর জন্য পরামর্শ দিচ্ছে ইসরায়েলে অবস্থান করা মার্কিন উপদেষ্টারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছিল, গাজায় অভিযান শুরুর সুস্পষ্ট কারণ পাওয়ার আগপর্যন্ত উপত্যকাটিতে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

তবে পুরোদস্তুর অভিযান শুরু করতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরের চাপ নিয়ে মাহজুব জয়েইরি বলেন, ‘গাজা সীমান্তে এত সেনা একত্র করার পর এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ার পর দেশের ভেতরের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা ইসরায়েলিদের জন্য আবশ্যক হয়ে পড়েছে।’