আলোচনার অগ্রগতিকে তিন সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ক্ষেত্রে নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না।
ফিলিস্তিনের গাজায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি শুরু হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এ অবস্থায় কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। যদিও যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে করে আসছে ইসরায়েল। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ৩২৬ জনে দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে তিন হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে নিহত হয়েছেন আরও ১১০ ফিলিস্তিনি।
কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে আল–জাজিরা জানিয়েছে। এই অগ্রগতিকে তিন সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ক্ষেত্রে নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় নিয়ে আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে দোহা ইনস্টিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রেজল্যুশন অনুষদের ডিন ইব্রাহিম ফ্রাইহাত গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ‘এটি বড় সাফল্যের খবর। তবে এটা নির্ভর করছে সমঝোতার শর্তের ওপর। এটা কি মানবিক যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে, নাকি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে কিংবা এই যুদ্ধের অবসান হতে যাচ্ছে?’
ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা জানি, ইসরায়েল যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে, এমনকি মানবিক যুদ্ধবিরতিও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বৃহস্পতিবার এক সভায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। এতটুকু বলতেও তারা কিছুটা লজ্জিত। সে অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ইসরায়েলের ওপর তেমন বড় ধরনের চাপ নেই।’
এদিকে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে শর্ত দিয়েছে হামাস। আবু হামিদ নামের হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া গাজার বিভিন্ন সংগঠনের হাতে থাকা এসব বন্দীর অবস্থান নির্ধারণও জরুরি। তিনি বলেন, গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে থাকা ৫০ জন জিম্মি ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন।
হামাসের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার কমেরসান্ত পত্রিকা বলেছে, বর্তমানে মস্কো সফরে রয়েছে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের কারণে আরও অনেক মানুষ মারা পড়বেন বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক সংস্থাটি গতকাল বলেছে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে মৌলিক পরিষেবাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য পরিচালিত জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি বলেন, ‘আমরা যখন বলছি গাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, শুধু গোলাবর্ষণ আর বিমান হামলাতেই তাঁরা মারা যাচ্ছেন না, গাজা উপত্যকায় চাপিয়ে দেওয়া অবরোধের কারণে অচিরেই অনেকে প্রাণ হারাবেন।’
লাজ্জারিনি বলেন, মৌলিক পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে। খাবার ও পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। গাজার সড়কগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পয়োনিষ্কাশনের পানি।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গতকাল বৈশ্বিক সংস্থাটি এই উদ্বেগের কথা জানায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি বলেছেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। হামাসের নৃশংসতার জবাবে গাজার সব বাসিন্দাকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, এটাও যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে।’
গতকাল জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান বলেন, গাজা উপত্যকার জন্য প্রয়োজন ‘অর্থবহ ও নিরবচ্ছিন্ন’ ত্রাণ সরবরাহ। গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণসহায়তাকে চাহিদার তুলনায় ‘কয়েক ফোঁটার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে লাজ্জারিনি বলেন, বর্তমানে যে ব্যবস্থায় ত্রাণ সরবরাহ হচ্ছে, তা ব্যর্থ হওয়ার পথে। অর্থবহ ও নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন। এ জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতি দরকার।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেয় শিশুরাও।