বিভেদ ভুলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৈঠকে বসলেন মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহানের মধ্যে এ বৈঠক হয়।
২০১৬ সালের পর প্রথমবার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেন মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ। তেহরান বলেছে, চীনের মধ্যস্থতায় এক চুক্তির অধীন দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পথ প্রশস্ত হয়েছে।
সৌদি আরবের আল-এখবারিয়া টিভি এই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও সম্প্রচার করেছে। ওই ভিডিওতে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদুল্লাহিয়ানকে চীনে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান দুই দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরান ও সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক পুনরুদ্ধার এবং দুই দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট পুনরায় চালু করার বিষয়ে নির্বাহী পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেছেন।
সৌদি রাষ্ট্রীয় টিভি আল এখবারিয়া জানিয়েছে, দুই মন্ত্রী বেইজিংয়ে ‘চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা’ করার জন্য একটি বৈঠক করেছেন। সৌদি ও ইরানের পতাকার সামনে দুই নেতা হাত নাড়ানোর ফুটেজ প্রচার করেছেন এবং তারপর কথা বলছেন এবং হাসছেন।
এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় ইরান ও সৌদি আরব।
সম্প্রতি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এ সময় ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের চলমান প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই নেতা।
এই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে চীন। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ইরান-সৌদি সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই নেতার কথা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়নে একে অপরকে সমর্থন দেওয়ার কথা ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানকে জানিয়েছেন সি চিন পিং।
২০১৬ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সে বছর শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। এ ঘটনার প্রতিবাদে তেহরানে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে হামলা চালান ইরানের বিক্ষোভকারীরা। এর জেরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে সৌদি আরব। এখন সাত বছরের মাথায় দুই দেশ সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সম্মত হয়েছে।