জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলাকারী ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স কারা, ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী

জর্ডানের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিটি টাওয়ার ২২ হিসেবে পরিচিত
ছবি: রয়টার্স

জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে ৩ জন সেনাকে হত্যা ও ৩৪ জনকে আহত করার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইরাকভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স। আক্রান্ত মার্কিন ঘাঁটিটি টাওয়ার ২২ হিসেবে পরিচিত। এটি ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। হামলার জন্য ইরান–সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ইরান এই হামলার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স বলেছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হটানোও তাদের লক্ষ্য।

ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে ইরান–সমর্থিত মিলিশিয়াদের তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। সশস্ত্র এই গোষ্ঠী গাজায় ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের মতে, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের পরিচয় স্পষ্ট নয়। ফলে কোনো হামলার পর দায় এড়ানোর সুযোগ পায় গোষ্ঠীর সদস্যরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি বলেছে, প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ এখানে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ওপর অন্তত ২০টি হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স।

গতকাল রোববার জর্ডানের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পরে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স বলেছে, সিরিয়ার তিনটি স্থানে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ইরাক, সিরিয়া ও জর্ডান সীমান্তের নিকটবর্তী দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে তাদের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা নিহত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি গোষ্ঠীটি।

ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় ইরানের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ওপর অন্তত ২০টি হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স।
তবে সব মিলিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের ওপর দেড় শতাধিক হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স। গতকালের হামলার আগপর্যন্ত অন্তত ৭০ মার্কিন সেনা আহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগেরই মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

টাওয়ার ২২ কী

টাওয়ার ২২ জর্ডানের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। দেশটির উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত এই টাওয়ারের এক পাশে ইরাক, অন্য পাশে সিরিয়া।
তবে এই ঘাঁটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। ঘাঁটিটি আল-তানফ সেনানিবাসের কাছাকাছি। সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত এসব সেনানিবাসে অল্পসংখ্যক মার্কিন সেনা থাকে।

টাওয়ার ২২ জর্ডানের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। দেশটির উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত এই টাওয়ারের একপাশে ইরাক, অন্য পাশে সিরিয়া।

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আল-তানফ। এ ছাড়া সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের অংশ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে আল-তানফ ঘাঁটিটি।

ড্রোন হামলার পর মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আগুন জ্বলছে

টাওয়ার ২২ আল-তানফে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের কাছাকাছি। এটা এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যেন প্রয়োজনে একে অন্যদের সহযোগিতা করতে পারে। ওই এলাকায় ইরান-সমর্থিত জঙ্গি দমনেও ভূমিকা রেখেছে টাওয়ার ২২। পাশাপাশি ওই অঞ্চলে আইএসের অবশিষ্ট কেউ থাকলে তাদের নজরদারি করতে মার্কিন সেনাদের সাহায্য করছে ওই ঘাঁটিটি।

২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর জর্ডানে বিস্তৃত নজরদারি পদ্ধতি চালু করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে ওয়াশিংটন। সিরিয়া ও ইরাক থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নেওয়া এই ব্যবস্থা বর্ডার সিকিউরিটি প্রোগ্রাম নামে পরিচিত।
জর্ডানে শত শত মার্কিন প্রশিক্ষক রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব মিত্র বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক মহড়া করে, সেগুলোর মধ্যে জর্ডান অন্যতম।

জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় জড়িতদের সমর্থনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ নাকচ করেছে ইরান

সীমান্তে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে গত বছর ওয়াশিংটনের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চেয়েছিল আম্মান। এ ছাড়া সিরিয়া সীমান্তে শত শত বিলিয়ন ডলারের মাদক চোরাচালানবিরোধী লড়াইয়ে ড্রোন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছে তারা। এই চোরাচালানের জন্য দক্ষিণ সিরিয়ায় শক্ত অবস্থানে থাকা ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করছে আম্মান।
আটলান্টিক কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, আইএসের অবশিষ্ট অনুসারীদের দমনের জন্য ইরাকে প্রায় আড়াই হাজার ও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় ৯০০ মার্কিন সেনা রয়েছে।

তবে টাওয়ার ২২-এ কতজন মার্কিন সেনা রয়েছে, সেটি জানা যায়নি। এ ছাড়া তাদের কাছে কী ধরনের অস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে এবং হামলার ফলে ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে, সেটিও অজ্ঞাত।