ইরানে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যে ধরনের হামলা হয়েছে, তাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এমনকি তারা এটাও বলছে, ইরানে বাইরের দেশ থেকে কোনো ধরনের হামলা হয়েছে বলে তাদের মনে হচ্ছে না। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ক্ষুদ্রাকৃতির ড্রোনের মজার ছবি পোস্ট করেছে।
ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানের কাছে বেশ কয়েকটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর ইরানের গণমাধ্যম গতকাল শুক্রবার বিদেশ থেকে ইরানে হামলার দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে। ‘ওয়াকিবহাল সূত্রের’ বরাত দিয়ে তাসনিম বার্তা সংস্থা বলেছে, ইস্পাহান বা ইরানের অন্য কোনো অংশে বিদেশ থেকে কোনো হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
কিন্তু এ হামলা ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। এর একটি হচ্ছে, ইরানের কট্টরপন্থী রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কর্মকর্তারা কি এখন প্রতিশোধের পথে ছুটবেন? আরেকটি হচ্ছে, ইসরায়েল কি আরও বড় ধরনের আক্রমণ করবে?
১৪ এপ্রিল ইসরায়েলে ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, সেটি হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে না চটিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া দেখানোর একটি চেষ্টা। ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলে হামলা নিয়ে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ইরান বিষয়ে উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ সত্ত্বেও ইসরায়েল নিজেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বাইডেন গত শনিবার বলেছেন, ইরানি হামলা ঠেকিয়ে দিয়ে ইসরায়েল মূলত জয়ী হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের অন্য মিত্ররাও সংযম দেখানোর আহ্বান জানায়।
ইরানে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা যদি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে চালানো হয়ে থাকে, তবে তা কি নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সাবেক জেনারেলদের সন্তুষ্ট করতে পারবে—এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী নেতারা চান ইরানকে কঠোর জবাব দিতে। নেতানিয়াহুর অতি জাতীয়তাবাদী জোট মিত্রদের একজন বলেছেন, ইরানের ওপর সবকিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার।
পশ্চিমা দেশগুলোর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিরসনে এখন সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সীমারেখা বেঁধে ফেলা। মধ্যপ্রাচ্যে এই লড়াইয়ের শুরুটা করেছিল ইসরায়েল। তারা সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাস প্রাঙ্গণে বোমা হামলা চালিয়ে তিনজন জেনারেলসহ কমপক্ষে সাতজনকে হত্যা করেছে।
ইরান ও ইসরায়েল সংকট এই পর্যায়ে আপাত শেষ মনে হলেও তাতে নতুন নজির তৈরি হয়েছে। ইরান তাদের ভূখণ্ড থেকে প্রথমবার সরাসরি ইসরায়েলের ওপর আঘাত হেনেছে এবং ইসরায়েলে সরাসরি হামলা করে তার জবাব দিয়েছে। এটি এখন এই অঞ্চলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘ দ্বন্দ্বের ‘খেলার নিয়মের’ হিসাব–নিকাশে পরিবর্তন এনেছে। দুই দেশই এখন তাদের মধ্যে দীর্ঘ ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছে।