গাজায় ইসরায়েলি হামলা

যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশে দেশে বিক্ষোভ, বাড়ছে যুদ্ধবিরতির চাপ

ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে শিশুরা। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে
ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। চলমান এ বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন মাত্রা পেয়েছে। যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি জোরদার হচ্ছে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবিও।

বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে সে দেশের ইহুদি সম্প্রদায়। গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্রথম থেকেই তারা সরব। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবারও নিউইয়র্কের অনন্য নিদর্শন স্ট্যাচু অব লিবার্টি ঘিরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ইহুদি সম্প্রদায়ের কয়েক শ মানুষ।

বিক্ষোভকারীদের গায়ে ছিল কালো টি-শার্ট। এতে লেখা ছিল ‘এখনই যুদ্ধবিরতি চায় ইহুদিরা’, ‘আমার নামে নয়’—এমন নানা ধরনের স্লোগান। আর তাঁদের ব্যানারে লেখা ছিল ‘গোটা বিশ্ব নজর রাখছে’ এবং ‘ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা পাওয়া উচিত’।

একই দিন ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের টাকোমা সমুদ্রবন্দরেও বিক্ষোভ হয়েছে। একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ আটকে দিতে এ বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ধারণা, যুদ্ধাস্ত্র বোঝাই করে এই যুদ্ধজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরায়েলে যাচ্ছে।

প্রতিবাদকারীরা বৃষ্টির মধ্যে বন্দরমুখী সড়কে লাইন ধরে অবস্থান নেন। এ ছাড়া গাড়ি রেখে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে তিনটি বড় ব্যানার দেখা যায়, যাতে ‘ইসরায়েলকে কোনো সহায়তা নয়’সহ নানা স্লোগান ছিল। কয়েক দিন ধরে ওয়াশিংটন, ডেনভারসহ বিভিন্ন শহরেও বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। ওয়াশিংটনের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হত্যাযজ্ঞে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় নিজ দলেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি গাজায় গণহত্যায় সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত একমাত্র কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তালিব।

গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতির দাবিতে মঙ্গলবার বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে। ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই পাকিস্তানজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ থেকে মুসলিম নেতাদের নিষ্ক্রিয়তারও সমালোচনা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছে ফিলিস্তিনি শিশুরা

গাজায় এক মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নারী, শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জাতিসংঘের কর্মী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিকেরাও।

এ অবস্থায় মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপেও বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানানো হয়।

ইউরোপে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনে। সেখানে এক বিক্ষোভে ৩০ হাজারের মতো মানুষ অংশ নেন বলে জানায় লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। যদিও আয়োজকদের দাবি, এতে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন।

বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে ফ্রান্সেও। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সেখানে বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। পরে বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়া হলে প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে আয়োজিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে নিষেধাজ্ঞা দেয় জার্মানিও। পরে বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়া হলে বার্লিনে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ জড়ো হন। তাঁরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানান।

ইতালির মিলানে প্রায় চার হাজার মানুষ যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘যুদ্ধ থামাও, কোনো বর্ণবাদ নয়’ স্লোগান দেন।

ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সেও। সেখানকার একটি অস্ত্রকারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীরা।

শনিবার জাপানে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। ওই বিক্ষোভে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ অংশ নেন বলে আয়োজকেরা জানান। বিক্ষোভকারীরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবি জানান।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে তুরস্কে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সফরের প্রতিবাদেও দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। তাঁর সফরের আগের দিন রোববার ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতির দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ

দেশটির আদানা শহরের কাছে ইনচিরলিক সামরিক ঘাঁটির সামনেও এদিন বিক্ষোভ হয়েছে। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এই ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ঘাঁটির দিকে এগোতে চাইলে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতির দাবিতে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইয়েমেন, জর্ডান, মিসর, কাতার, ইরাক, ইরান, মালয়েশিয়া ও রাশিয়া বিক্ষোভ করেছে।

যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপও বাড়ছে। গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বলিভিয়া। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, চিলি, হন্ডুরাস, চাদ, তুরস্ক, জর্ডান ও বাহরাইন ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে।