সিরিয়ার হামা শহরের সড়কে গাড়িবহরে বিদ্রোহীরা
সিরিয়ার হামা শহরের সড়কে গাড়িবহরে বিদ্রোহীরা

দামেস্কের ২০ কিলোমিটার দূরত্বে বিদ্রোহীরা

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি চলে এসেছে বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের সরকারি বাহিনীকে পিছু হঠিয়ে আলেপ্পো, হামাসহ গুরুত্বপূর্ণ শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর বিদ্রোহীরা এখন দামেস্ক শহরের দিকে যাচ্ছে।

আজ শনিবার সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে দারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দামেস্ক থেকে তাদের দূরুত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল)।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেন, স্থানীয় বিদ্রোহী যোদ্ধারা এখন দারা প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সিরিয়ার উত্তর–পশ্চিমে বিদ্রোহী জোটের নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ডার আবদেল ঘানি বলেন, ‘রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণ প্রবেশপথ থেকে আমরা ২০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে রয়েছি।’ এর আগে গতকাল ইসরায়েলে সীমান্তের কাছে কুইনেত্রা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ওই এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে।

গত ২৭ নভেম্বর হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর ওপর আকস্মিক হামলা শুরু করে। আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠন থেকে বের হয়ে এইচটিএস গঠিত হয়। এইচটিএসের নেতৃত্বে ঘটনার আকস্মিকতায় দৃশ্যত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সরকারি বাহিনী। বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার মধ্যাঞ্চলীয় হামা শহর থেকে পিছু হটে সরকারি বাহিনী। এর পর থেকে একে একে অন্য শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে আসাদের সরকারি বাহিনী। এর আগে যুদ্ধে বাশার আল-আসাদের বাহিনী এত অল্প সময়ের মধ্যে এত গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায়নি।

এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করাই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

এদিকে মিত্রদেশ সিরিয়ায় অবস্থানরত কমান্ডারসহ সেনাসদস্যদের গত শুক্রবার সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে ইরান। এমন এক সময় তেহরানের সেনা সরিয়ে নেওয়ার এ খবর জানা গেল, যখন সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের বাহিনীকে হটিয়ে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বিদ্রোহীরা।

ইরানের এ পদক্ষেপ বাশার আল–আসাদের জন্য তেহরানের নীতিতে উল্লেখযোগ্য বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেননা, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের অন্যতম মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইরানকে। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা সিরীয় গৃহযুদ্ধে আসাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তেহরান।

রাশিয়ার পাশাপাশি ইরানও বাশার আল–আসাদের সিরীয় সরকারের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক, ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইরান সিরিয়ায় থাকা সামরিক ঘাঁটিগুলোয় নিজেদের কমান্ডার ও উপদেষ্টা পাঠিয়ে আসাদ সরকারকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে। এমনকি সিরিয়ায় সরকারপন্থী মিলিশিয়াদের সমর্থন দেয় ইরান।

বিদ্রোহীদের দ্রুতগতিতে দামেস্কের দিকে এগিয়ে আসার মধ্যেই সরকারি বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাশারের ক্ষমতা টেকাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকারি বাহিনী হোমস শহরটির প্রতিরক্ষা জোরদারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সামরিক সূত্রগুলো বলছে, বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।

এদিকে বিদ্রোহীরা দেশটির দক্ষিণ–পশ্চিমে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। তারা দামেস্ক ও জর্ডানের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সরকারি বাহিনী তাদের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ না করে নতুন অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছে।

এদিকে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে গতকাল ইরান, রাশিয়া, তুরস্কের আলোচনায় বসার কথা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, এ নিয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দোহার বৈঠকে সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।