জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

বাইডেনের উল্টো বক্তব্য নেতানিয়াহুর, সিনওয়ারকে হত্যার পরও হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

ইসরায়েল হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান হবে বলে অনেকে আশা করছিলেন। কিন্তু আজ শুক্রবার তাঁদের এমন আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন মাত্রায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ইরান বলেছে, সিনওয়ারের মৃত্যুতে ‘প্রতিরোধযুদ্ধের প্রেরণা’ আরও জাগ্রত হবে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলার মূল পরিকল্পনাকারী মনে করা হয় হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে। গত বুধবার গাজার সর্বদক্ষিণের রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন সিনওয়ার। পরদিন বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরায়েল।

ইসরায়েল–গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি ট্যাংক। ১৫ অক্টোবরের ছবি

আজ সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাসও। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হায়া এক বক্তব্যে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী সিনওয়ারকে হত্যা করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শেষ দিকে সিনওয়ারকে হত্যার ঘোষণা দেওয়ার পর নেতানিয়াহু বলেন, সিনওয়ারকে হত্যা একটি মাইলফলক। তবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি। এই যুদ্ধ গাজা থেকে এখন লেবানন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। দেশটির বড় একটি অংশে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলিদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার প্রিয়জনেরা, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।’ হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে জানান তিনি।

হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার

ইরান ও গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে তেহরানের মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘শয়তানের অক্ষকে দমিয়ে দেওয়া এবং ভিন্ন এক ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে।’

এখনই থামছে না যুদ্ধ

অবশ্য নেতানিয়াহুর বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা নেতাদের বিপরীত। বাইডেন বলেছেন, সিনওয়ারের মৃত্যু এই সংঘাত অবসানের একটি সুযোগ তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু এবং জিম্মি মুক্তি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সিনওয়ার আলোচনা করতে রাজি হননি বলেও দাবি করেন তিনি।

ম্যাথু মিলার বলেন, ‘এই প্রতিবন্ধকতা স্পষ্টত দূর হয়েছে। সিনওয়ারের স্থলাভিষিক্ত যিনি হবেন, তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন কি না, আগ বাড়িয়ে তা বলতে পারছি না। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেটা দূর হয়েছে।’

লেবাননে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছেন, সিনওয়ারের মৃত্যুতে যুদ্ধের অবসান হবে, সেটা ভুল ধারণা। তিনি বলেন,‘আমরা আসলেই এমনটা আশা করেছিলাম যে, সিনওয়ার থেকে মুক্তি পাওয়া গেলে সেটা যুদ্ধ বন্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল হবে। সব পক্ষই অস্ত্র সংবরণের জন্য প্রস্তুত হবে। তবে মনে হচ্ছে, আমরা আবারও ভুল করতে যাচ্ছি।’

হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা নিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ফুটেজ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, ফুটেজে যে ব্যক্তিকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়, তিনি হামাসপ্রধান সিনওয়ার। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া

ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় দেশটির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক মাস ধরে চালানো যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসহায়তার কারণে ইসরায়েলের সামরিক শক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না ইসরায়েলের চিরশত্রু ইরান।

নতুন মাত্রায় যুদ্ধে শুরুর ঘোষণা হিজবুল্লাহর

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন মাত্রায় যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির দাবি, তারা প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘ইসরায়েলি শত্রুপক্ষের সঙ্গে চলমান সংঘাত একটি নতুন এবং বর্ধিত পর্যায়ে রূপান্তরিত হয়েছে।’ আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এ ঘোষণার প্রতিফলন দেখা যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

হিজবুল্লাহ আরও দাবি করেছে, ১ অক্টোবর থেকে লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর পর ৫৫ সেনা হারিয়েছে ইসরায়েল। আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া সাম্প্রতিক লড়াইয়ে ইসরায়েলের ২০টি মারাকাভা ট্যাংক, চারটি সামরিক বুলডোজার ও দুটি নজরদারি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।