পুলিশি হেফাজতে ইরানের তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর জেরে চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) আজ শনিবার এ তথ্য জানায়।
কঠোর ‘পর্দাবিধি’ মেনে হিজাব না পরার অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে তেহরান থেকে আটক করে ‘নীতি পুলিশ’। আটকের পর পুলিশি হেফাজতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নির্যাতনে মাসার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ইরানের মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি নিজেদের ওয়েবসাইটে আজ এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪৩টি শিশু ও ২৫ জন নারী রয়েছেন।
৫ নভেম্বর সংগঠনটি যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখান থেকে আজকের তালিকায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২২ জন বেড়েছে। নতুন তালিকায় জানানো হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সিস্তান–বেলুচিস্তান প্রদেশেরই ১২৩ জন রয়েছেন। এক সপ্তাহে সেখানে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ৫ জন।
এই বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে। সেদিন জুমার নামাজের পর নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দমনে গুলি চালায়। ওই বিক্ষোভ ছিল এক পুলিশ কমান্ডারের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, প্রদেশটির বন্দরনগর চাবাহারে পুলিশ হেফাজতে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেলুচিরা মাসার মৃত্যুর প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ চলছে, তাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
আইএইচআর পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম এই দমন–পীড়ন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত ও জবাবদিহি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ দুই উদ্যোগ ভবিষ্যতে অপরাধীদের জবাবদিহি করার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে চলমান দমন-পীড়নের জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।
আরেক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে। তারা এর সপক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত আবেদন দিয়েছে।
আইএইচআর বলেছে, তারা এখনো অন্যান্য মৃত্যুর খবর তদন্ত করছে, যার অর্থ নিহত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা ‘নিশ্চিভাবে বেশি’।