যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র, সংযত হওয়ার আহ্বান অন্যদের

ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েল বলেছে, তেহরানকে এ জন্য ‘কঠিন পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। অন্যদিকে হামলা হলে আরও ‘ধ্বংসাত্মক পাল্টা হামলার’ হুমকি দিয়েছে ইরান। এতে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইরান–সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাকে হত্যার জবাবে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানায় তেহরান। এমন সময় এ হামলা চালানো হয়েছে, যখন লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। এর আগে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে মধ্য এপ্রিলে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল তেহরান। ওই হামলার জবাবে ইরানের অভ্যন্তরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের’ নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতের পরিসর বাড়িয়েছে ইসরায়েল। এ অঞ্চলে ‘উসকানির পর উসকানি’ দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’

ইসরায়েলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান যখন ইসরায়েলের ভূখণ্ডে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছিল, তখন ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘সক্রিয়ভাবে’ সহায়তা দিয়ে যাবে ওয়াশিংটন।

এর আগে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জ্যাক সুলিভান বলেন, ইরানের হামলা সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার বড় ঘটনা। তিনি আরও বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এ হামলার পরিণতি গুরুতর হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে একত্রে কাজ করব।’

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, এ অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) উত্তেজনা কমাতে প্রতিরোধ ও কূটনীতি—উভয় কৌশল ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।

তীব্র নিন্দা যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের

ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় তাঁদের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানান।

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, তেহরানকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা মোতায়েন করেছে ফ্রান্স। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ আর ইসরায়েলকে লেবাননে তাদের সামরিক অভিযান বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সংযত হওয়ার আহ্বান স্পেন ও জাপানের

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের চক্র বন্ধে ইরান ও ইসরায়েলকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্পেন ও জাপান। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইরানের হামলার নিন্দা জানান এবং মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করা সহিংসতার এই চক্র বন্ধের আহ্বান জানান।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমন এবং পুরোদমে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার উসকানি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে আমরা ইচ্ছুক।’

এ ছাড়া ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়ে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেছেন, ইরানকে এখনই হামলা বন্ধ করতে হবে। এটি এ অঞ্চলকে অতল গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে।