ইরানে পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়া কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে (২২) সর্বোচ্চ মানবাধিকার পুরস্কারে ভূষিত করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
মাসার মৃত্যুর জেরে ইরানে শুরু হওয়া ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনকেও যৌথভাবে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
ইরানের কঠোর ইসলামি পোশাকবিধি অমান্য করার অভিযোগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানে মাসাকে আটক করেছিল দেশটির নীতি পুলিশ। ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশি হেফাজতে মারা যান।
মাসার পরিবার-সমর্থকদের ভাষ্য, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে থেকে থাকা অজ্ঞাত স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি মারা গেছেন।
মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভের জেরে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দেশটির শাসকগোষ্ঠী।
মানবাধিকারকর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের চিন্তার স্বাধীনতার স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর শাখারভ পুরস্কার দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
এবারের পুরস্কার ঘোষণার পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্তা মেটাসোলা বলেছেন, মাসার মৃত্যুর দিনটি কলঙ্কময় হয়ে থাকবে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২২ বছর বয়সী মাসার নৃশংস হত্যাকাণ্ড একটি সন্ধিক্ষণকে চিহ্নিত করেছে। তাঁর মৃত্যু নারী-নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে, যা ইতিহাস তৈরি করছে।
মাসার মৃত্যুর জেরে ইরানে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন–পীড়ন চালায়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিন্দা জানায়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানি নারীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানায়। ফলে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ শীর্ষক আন্দোলন বৈশ্বিক রূপ নেয়। তারা ইরানের নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের আহ্বান জানায়।
বিক্ষোভে দমন–পীড়ন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ইরানি ব্যক্তি-সংস্থার ওপর গত বছর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউ।
মাসা ও ইরানি নারীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে সংহতি-সমর্থন, সে বিষয়ে আরও দৃঢ় বার্তা দিল এবারের শাখারভ পুরস্কার।
সম্মানজনক এই পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা আছেন। আছেন পাকিস্তানের নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই।
শাখারভ পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার ইউরো। আগামী ডিসেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।