ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান শহর খান ইউনিস ঘিরে ফেলেছেন ইসরায়েলি সেনারা। প্রাণ বাঁচাতে শহর ছাড়ছেন হাজারো বাসিন্দা। এদিকে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার জানিয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালানোর সময় বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তাঁদের অনেকেই খান ইউনিসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি ঘিরে ফেলার কথা জানান ইসরায়েলি সেনারা। এরপর সেখানকার পাঁচ লাখ বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মানুষের মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে। সেগুলো রেখেই আমরা চলে এসেছি। একটি বাসায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আমাদের মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে মারা পড়তে পারি।বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা হিশাম সায়েগ
সিএনএনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাস্তুচ্যুত মানুষ রাস্তার পাশে এবং সমুদ্র উপকূলের আশপাশে বসে আছেন। গাড়ি, ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো পরিবারগুলো ও তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহন করছে। লোকজনকে দলবেঁধে হেঁটে যেতেও দেখা যায়।
পলায়নপর লোকজন ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা হিশাম সায়েগ বলেন, ‘মানুষের মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে। সেগুলো রেখেই আমরা চলে এসেছি। একটি বাসায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আমাদের মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে মারা পড়তে পারি।’
গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় আরও প্রায় ২১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৮৬ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর ২৫ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৭৪০ জন।
গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার বিষয়ে সাময়িক আদেশ শুক্রবার নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে বলে নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
গাজায় এক মাসের যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। লড়াইয়ে বিরতি এবং আরও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর শর্ত নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতায় কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর।
তবে গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে দুই পক্ষ বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা এগিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হামাস।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার বিষয়ে সাময়িক আদেশ শুক্রবার নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে বলে নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিচার বিভাগ ও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আবারও বলেছেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের সুস্পষ্ট ও ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান’ অগ্রহণযোগ্য। এটি কেবল গাজায় সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্বীকৃতি শুধু সর্বত্র চরমপন্থীদের উৎসাহিত করবে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলা চলমান সংঘাত অনির্দিষ্টকালের জন্য জিইয়ে থাকবে।