গত বছর ইরান ২২ নারীসহ অন্তত ৮৩৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। ২০১৫ সালের পর এটি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। আজ মঙ্গলবার নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস ও প্যারিসভিত্তিক টুগেদার এগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টি এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটেছে, ২০২২ সালে সেই সংখ্যা প্রায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
দুটি মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দশকের মধ্যে এক বছরে ৮০০-এর বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল। এর আগে ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৭২।
গ্রুপগুলোর অভিযোগ, ২০২২ সালে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে, তার প্রেক্ষাপটে সমাজে ভয় ছড়িয়ে দিতে ইরান এই মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করছে।
আইএইচআর-এর পরিচালক মোহাম্মদ আমিরি মোঘাদ্দাম এক প্রতিবেদনে ৮৩৪ সংখ্যাটিকে ‘বিস্ময়কর’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সমাজে একধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখাই হলো ক্ষমতা ধরে রাখার একমাত্র উপায়। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড হলো সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।’
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনকে ২০২২ সালে, ছয়জনকে ২০২৩ সালে আর একজনকে চলতি বছর।
কিন্তু অন্যান্য অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, বিশেষ করে মাদকসংক্রান্ত মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। অথচ ২০২৩ সালের আগের বছরগুলোতে এ ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কম ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০২৩ সালে মাদক-সম্পর্কিত মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা অনেক বেড়ে ৪৭১ জনে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালের সংখ্যার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি।
এতে বলা হয়েছে, মাদক সম্পর্কিত অভিযোগে যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বের সুন্নি বালুচদের সংখ্যা বেশি। সংখ্যালঘু বালুচ জনগোষ্ঠীর অন্তত ১৬৭ জনকে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে; যা ২০২৩ সালের মোট সংখ্যার ২০ শতাংশ। যদিও এই জনগোষ্ঠীর সদস্য হলো মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ।
টুগেদার এগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টির (ইসিপিএম) পরিচালক রাফেল চেনুইল-হাজান বলেন, মাদক ও অপরাধবিষয়ক জাতিসংঘের দপ্তরের, ‘প্রতিক্রিয়ার ঘাটতি’ ইরানের কর্তৃপক্ষকে ভুল বার্তা দিচ্ছে।
ইরানে বেশির ভাগ ফাঁসি কারাগারের ভেতরেই হয়। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশটিতে জনসমক্ষে ফাঁসির সংখ্যা এর আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে।
২০২৩ সালে নথিভুক্ত মৃত্যুদণ্ডের মাত্র ১৫ শতাংশের খবর দেশটির গণমাধ্যমে এসেছে। আর বাকিগুলোর তথ্য আইএইচআর নিজেদের সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছে।