ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বিক্ষোভ করেছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ। স্থানীয় সময় আজ শনিবার দুপুরে এ বিক্ষোভে অংশ নেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।
বিক্ষোভ শুরুর আগে থেকেই বিক্ষোভস্থল হাইড পার্কে জড়ো হতে শুরু করেন নানা বয়সী লোকজন। শনিবার ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মরণ দিবস বা আর্মিস্টিক ডে। একই দিনে বিক্ষোভ ও স্মরণ অনুষ্ঠান ঘিরে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকায় আগে থেকেই যুক্তরাজ্য পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল।
ন্যাশনাল মার্চ ফর প্যালেস্টাইন নামে এ বিক্ষোভ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় শুরু হয়। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন যুক্তরাজ্যের মানুষ।
সে ধারাবাহিকতায় আজকের বিক্ষোভে তিন লাখ মানুষ অংশ নেন। তবে আর্মিস্টিক ডের কারণে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ বাতিল করতে বলা হয়। সেনোটাফ স্মৃতিসৌধে আয়োজিত সৈনিকদের স্মরণ দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে হাজারো পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।
এদিকে আর্মিস্টিক ডের দিন ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ ডাকায় প্রধানমন্ত্রী সুনাক এর সমালোচনা করেন। ডানপন্থী বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশ ও ডানপন্থী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিতে গতকাল শুক্রবার বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে আসেন আবিদ মাহমুদ। ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে বিক্ষোভে অংশ নেন ২৫ বছর বয়সী এই যুবক।
আবিদ মাহমুদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনের আমাদের প্রয়োজন, তারা অন্য কাউকে পায়নি। কেউ তাদের সমর্থন করছে না এবং যা ঘটছে তা নিষ্ঠুর। মানুষ মারা যাচ্ছে। বাচ্চাদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের আমাদের সমর্থন করা দরকার।’
বিক্ষোভে আবিদের মতো পতাকা হাতে এসেছেন কেউ আবার কারও হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
পুলিশ বলেছে, যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে সেনোটাফে পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন।
লন্ডন পুলিশের উপসহকারী কমিশনার লরেন্স টেইলর শুক্রবার বলেন, এ সপ্তাহে পুলিশের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। পুলিশের জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং। পুলিশ সতর্কতার অংশ হিসেবে ওয়াটারলু, ভিক্টোরিয়া ও ক্যারিং ক্রস রেলস্টেশন বন্ধ করে দেয়।
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের আয়োজক প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) জানায়, বিক্ষোভ মিছিলটি সেনোটাফ মেমোরিয়াল থেকে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ডাউনিং স্ট্রিট অফিস হয়ে তিন কিলোমিটার দূরের মার্কিন দূতাবাসের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ফিলিস্তিনপন্থী এ বিক্ষোভে সহিংসতা উসকে যেতে পারে বলে একে অসম্মানজনক হিসেবে মন্তব্য করেন।
তবে এর আগে পিএসসি আয়োজিত সব বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সমর্থন ও আক্রমণাত্মক প্ল্যাকার্ড বহন করায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা সরকারগুলোর পক্ষ থেকে ইসরায়েলের প্রতি সমবেদনা ও সমর্থন জানানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্রতি সপ্তাহে লন্ডনে বিক্ষোভ হচ্ছে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এতে নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের কাছ থেকে পুলিশের দ্বিমুখী আচরণ নিয়ে চাপে পড়েন সুনাক। অনেকেই সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে বরখাস্তের দাবি তুলেছেন।
যুক্তরাজ্য ছাড়াও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শনিবার ফ্রান্সের তুলুজ, জার্মানির বার্লিন এবং শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মতো বড় শহরেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।