ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে হাতে আসা তথ্যের ভিত্তিতে একে দুর্ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। হেলিকপ্টারটিতে হামলার কোনো প্রমাণ আপাতত পাওয়া যায়নি।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভারজাগান এলাকায় গত রোববার ওই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এতে রাইসি ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আবদোল্লাহিয়ান ও ছয় কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন সোমবার হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলকে সেদিনই নির্দেশ দেয় ইরানের সামরিক বাহিনী।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তকারী দল। সেখান থেকে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি পূর্বনির্ধারিত পথ দিয়েই যাচ্ছিল। পার্বত্য এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেটিতে আগুন ধরে যায়। হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষে গুলির আঘাতের চিহ্ন বা এ ধরনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সময় সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে ইরানের কয়েকটি ড্রোন সেই হেলিকপ্টারটি খুঁজে পায়। এর কিছুক্ষণ পরেই সেখানে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা পৌঁছান বলে জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে হেলিকপ্টারটির সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে থাকা নিয়ন্ত্রণকক্ষের যে যোগাযোগ হয়েছিল, তাতে ‘সন্দেহজনক’ কিছু পাওয়া যায়নি। তদন্তকারী দলের হাতে আরও কোনো তথ্য এলে তা যথাসময়ে দেশের মানুষকে জানানো হবে।
রাইসিসহ হেলিকপ্টারটিতে থাকা আটজনের মৃত্যুতে গত সোমবার ইরানে পাঁচ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে রাইসিকে দাফন করা হয়েছে। এদিনই তেহরানে দাফন করা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ানকে। দাফনের আগে মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রায় অংশ নেন লাখো মানুষ।
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ নিহত অন্য ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়েছে। সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে ইরান সরকার ও দেশটির মানুষের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতিসংঘের পতাকাও অর্ধনমিত রাখা হয়।
এদিকে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার দিন ১৯ মে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) ১৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইরানও এই জোটের সদস্য। বৃহস্পতিবার জোটের সদস্যদেশগুলোর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিরা রাইসিসহ নিহত অন্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ আটজনের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইরানের স্থায়ী মিশনে একটি শোক বই খোলা হয়েছে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন জাতিসংঘের ৫০টি সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা।
শোক বইতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর একাংশ হলো রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, সিরিয়া, ইরাক, মিসর, জর্ডান, সার্বিয়া, আজারবাইজান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তিউনিসিয়া, উত্তর কোরিয়া, জাপান, বলিভিয়া, ভিয়েতনাম, সুদান, থাইল্যান্ড, উগান্ডা, বেলজিয়াম, ভ্যাটিকান, আয়ারল্যান্ড, গ্রিস, রুয়ান্ডা, ভেনেজুয়েলা, সিসিলি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নাইজার, লাটভিয়া, ব্রুনেই, টোগো, বসনিয়া-হারজেগোভিনা ও ফিলিস্তিন।
এদিকে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইরান দূতাবাসেও একটি শোক বই খোলা হয়েছে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন ইয়েমেনের সরকারি কর্মকর্তারা। রাশিয়ায় ইরান দূতাবাস পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহকারী আন্দ্রেই ফুরশেঙ্কো। এ সময় প্রেসিডেন্ট রাইসির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া একজন বন্ধুকে হারিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির যুবরাজ শেখ খালেদ বিন মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দেশটিতে ইরান দূতাবাস পরিদর্শন করে ইরানিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। আর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে ইরান দূতাবাস পরিদর্শন করেছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ত্রান লু কোয়াং।