আল শিফা হাসপাতাল থেকে শিশুদের সরাতে তারা প্রস্তুত, জানাল ইসরায়েল

গাজার উত্তরাঞ্চলে অব্যাহত হামলার মধ্যে গতকাল শনিবার সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে দক্ষিণাঞ্চলে সরে যান
ছবি: এএফপি

গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা এবং জ্বালানিসংকটকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার সেখানকার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে দুই নবজাতক মারা গেছে এবং আরও অনেকে ঝুঁকির মধ্যে আছে। আজ রোববার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা আল শিফা নামের ওই হাসপাতাল থেকে শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত আছে।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা বলেন, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ইনকিউবেটরে রাখা দুই শিশু মারা গেছে। তিনি বলেন, সর্বমোট ৪৫টি শিশু নিহত হয়েছে।

রয়টার্সকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিদরা বলেন, ‘আল শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের ভেতর আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এখানকার বেশির ভাগ ভবনকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।’

গাজায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বেসামরিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী শাখা সিওজিএটির প্রধান কর্নেল মোশে টেট্রো দাবি করেছেন, হাসপাতালটিতে কোনো গোলাগুলি হয়নি। সেখানে কোনো অবরুদ্ধ অবস্থাও নেই।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি ঘোষণা করেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ওই হাসপাতাল থেকে শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করবে।

হাগারি বলেন, ‘শিফা হাসপাতালের কর্মীরা অনুরোধ করেছেন, ‘আগামীকাল আমরা যেন হাসপাতালের শিশু বিভাগে থাকা শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করি। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা আমরা দেব।’

ইসরায়েলের অভিযোগ, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের আস্তানা আছে। তারা বলছে, হামাসকে মোকাবিলা করতে হলে ওই হাসপাতাল থেকে কর্মী, চিকিৎসক, রোগী ও আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষদের অবশ্যই সরে যেতে হবে।

তবে হাসপাতালটিকে নিজেদের কাজে ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস। চিকিৎসাকর্মীরা বলেছেন, রোগীদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে তারা মারা যেতে পারেন। আর ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলি হামলার কারণে সেখান থেকে অন্যরা নিরাপদে সরতে পারছেন না।

আল শিফার জ্যেষ্ঠ প্লাস্টিক সার্জন আহমেদ আল মোখাল্লালাতি রয়টার্সকে বলেন, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টানা বোমা হামলা হয়েছে। হাসপাতাল কর্মী এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের বেশির ভাগই সেখান থেকে সরে গেছে। তবে ৫শ’ রোগী হাসপাতালটিতে থেকে গেছে।

আহমেদ আল মোখাল্লালাতি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি একটি যুদ্ধাঞ্চল। হাসপাতালের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।’

গত শুক্রবার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর সেখানকার ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর ৪০ ভাগই শিশু।

এদিকে গাজার সীমান্ত কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিদেশি পাসপোর্টধারীদের গাজা থেকে মিসর যাওয়ার জন্য আজ রাফাহ ক্রসিং আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।