সিরিয়ার দামেস্কের উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত ইরানের শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডার সাইদ রাজি মৌসাভি ওই অঞ্চলে মিত্রশক্তিগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সবচেয়ে পুরোনো কমান্ডারদের একজন। ওই এলাকায় আশির দশক থেকে কাজ করছেন মৌসাভি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা সোমবার জানিয়েছে, দামেস্কের উপকণ্ঠের জেইনাবিয়া জেলায় ‘ইহুদিবাদী শাসকদের’ হামলায় সাইদ রাজি মৌসাভি নিহত হয়েছেন। তিনি সিরিয়ায় ইরানের শীর্ষ কমান্ডার হিসেবে কাজ করতেন। সিরিয়া ও ইরানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মৌসাভিকে সিরিয়ায় রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ উপদেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এর আগেও বেশ কয়েকবার মৌসাভিকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েল। এবার তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। ইরান ও ইরাক থেকে সিরিয়া এবং সেখান থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্রের চালান পৌঁছানোর নেটওয়ার্কে মৌসাভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিলেন বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। ইরানের কথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষের’ ভেতরে তিনি ছিলেন খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের এলিট বাহিনী কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানির অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন মৌসাভি। ২০২০ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় সোলাইমানি নিহত হন। ইরানের আঞ্চলিক তৎপরতা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন সোলাইমানি।
মৌসাভি নিহতের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এক্সিওস নাম প্রকাশ না করে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে সিরিয়া ও লেবানন থেকে রকেট হামলার বদলার বিষয়টিও থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কয়েক বছর ধরে সিরিয়ায় ইরান সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান। তখন থেকে দামেস্কের ওপর তেহরানের প্রভাব বেড়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইরান জানিয়েছিল, সিরিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের দুই সদস্য নিহত হয়েছেন। তাঁরা সিরিয়ায় সামরিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছিলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৌসাভির ওপর হামলাকে ‘ইহুদিবাদী শাসকদের’ হতাশার বহিঃপ্রকাশ বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিকভাবে ইসরায়েল কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলেও প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। এর জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।