বিক্ষোভে উসকানির অভিযোগ, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব ইরানের

মাসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ইরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তেহরান। পুলিশি হেফাজতে ইরানি নারী মাসা আমিনির মৃত্যুতে ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে, তাতে উসকানির অভিযোগে দেশ দুটির দূতকে তলব করা হয়। খবর রয়টার্সের।

ইরানে জনপরিসরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে কি না, তা তদারক করে দেশটির নৈতিকতাবিষয়ক পুলিশ। এই বিধির আওতায় নৈতিকতাবিষয়ক পুলিশের দল ১৩ সেপ্টেম্বর কুর্দি তরুণী মাসাকে তেহরান থেকে আটক করে। আটকের পর তিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের কাউকে কাউকে মাথার হিজাব খুলে পুড়িয়ে ফেলতে দেখা গেছে। কেউ কেউ জনপরিসরে নিজেদের চুল কেটে ফেলেছেন। বিক্ষোভ থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।

ইরানের অভিযোগ, লন্ডনভিত্তিক পার্সি ভাষার সংবাদমাধ্যম এ বিক্ষোভ নিয়ে ‘শত্রুপরায়ণ’ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ অভিযোগ জানাতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক ও ইন্টারনেটের স্বাধীনতার ওপর ইরানের ধরপাকড় অভিযানের নিন্দা জানায়।

একই দিন নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকেও তলব করেছিল ইরান। নরওয়ের পার্লামেন্ট স্পিকার মাসুদ ঘারাখানি ইরানের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। স্পিকারের এমন হস্তক্ষেপমূলক অবস্থানের ব্যাখ্যা চেয়ে নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়।

ঘারাখানির জন্ম তেহরানে। গতকাল তিনি টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘১৯৮৭ সালে আমার মা-বাবা যদি ইরান ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত না নিতেন, তাহলে হয়তো আমাকে এখন জীবনবাজি রেখে ইরানের রাস্তায় অন্য বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি লড়াই করতে হতো।’

মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের দাঙ্গাবাজ বলে উল্লেখ করছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিচ্ছে উল্লেখ করে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেছেন।

এদিকে মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কয়েকটি অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছেই। সূত্রের বরাতে রয়টার্স বলছে তাবরিজ, উরমিয়া, লামত ও হামেদানে বিক্ষোভ হচ্ছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন জেলায়ও বিক্ষোভ হচ্ছে।

গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে শিক্ষকদের প্রধান সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। সোমবার ও বুধবার ধর্মঘট করার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬ সেপ্টেম্বর আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।