ফিলিস্তিনের গাজার রাফা এলাকায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা আবেদনের ওপর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানির প্রথম দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে প্রিটোরিয়া। শুনানিতে দেশটির অভিযোগ—গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের শীর্ষ এ আদালতে আবেদনটি করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান ঘিরে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো আদালতটির কাছে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানাল দেশটি। এর আগে উপত্যকাটিতে গণহত্যার অভিযোগ এনে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে আইসিজের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হয়। এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী ভুসিমুজি ম্যাডোনসেলা বলেন, ‘শেষবার আমরা যখন আদালতে এসেছিলাম, আশা করেছিলাম, ফিলিস্তিন ও এই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের রক্ষায় জাতিগত নিধন বন্ধ হবে। তবে তেমনটি হয়নি। জাতিগত নিধন চালিয়ে গেছে ইসরায়েল। (বর্তমানে) তা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’
এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক আইনজীবী ভন লোয়ে বলেন, রাফায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের জন্যই তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে সব ফিলিস্তিনিকে হত্যা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। আর এই সুরক্ষা দেওয়ার আদেশের মাধ্যমে সে সুযোগ করে দিতে পারেন আইসিজে।
আইসিজেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ আবেদনে রাফা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মী ও সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে প্রবেশের পদক্ষেপ নিতে এবং এসব দাবি কীভাবে পূরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। আবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা কনভেনশন ক্রমাগত লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
দুদিনের এ শুনানির শেষ দিনে আজ শুক্রবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে ইসরায়েল। দুই দেশের মধ্যে বিবদমান কোনো বিষয় সমাধানে রায় দিয়ে থাকে আইসিজে। এই রায় মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানতে জোর খাটানোর এখতিয়ার নেই আদালতটির। যেমন ইউক্রেনে হামলা বন্ধে রাশিয়াকে আদেশ দিয়েছিলেন আইসিজে। তবে তা মানা হচ্ছে না।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামলার মুখে গাজার দক্ষিণে রাফায় আশ্রয় নেন লাখ লাখ মানুষ। এবার সেখানেও স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাহিনী। এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও।
তবে রাফায় হামলা বন্ধে রাজি নয় ইসরায়েল। দেশটির ভাষ্য, গাজা থেকে হামাসকে নির্মূলের জন্য সেখানে হামলা চালাবে। জাতিগত নিধনের অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছে তারা। চলতি বছরের শুরুতে গাজায় জাতিগত নিধন নিয়ে আইসিজের শুনানিতে ইসরায়েল দাবি করেছিল, উপত্যকাটির বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় তারা সম্ভব সবকিছু করছে। শুধু হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালাো হচ্ছে।