চিরুনি নেই, তাই চুল আঁচড়াতে পারছে না। গাজার অনেক মেয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ লোবনা আল-আজাইজার কাছে তাদের এই সমস্যা কথা জানালে তিনি তাদের চুল কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন।
গাজার মেয়েদের সামনে সংকট শুধু চিরুনি না থাকা নয়। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে গাজায় যুদ্ধ চলছে এবং ভূমধ্যসাগরের পাড়ের ছোট্ট এই উপত্যকা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। সেখানে সাবান, শ্যাম্পু, স্যানিটারি পণ্য বা বাড়িঘর পরিষ্কার রাখার উপাদান, কিছুই নেই বললেই চলে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃপরিশোধনের ব্যবস্থাও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। গাদাগাদি ভিড় ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সেখানে খোসপাঁচড়া বা ছত্রাক সংক্রমণের মতো ছোঁয়াচে রোগ বাড়ছে এবং খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসক আল-আজাইজা বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা সবচেয়ে বেশি যে রোগগুলো দেখতে পেয়েছি, সেগুলো হলো ত্বকে ফুসকুড়ি, চর্মরোগ। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেক কারণ আছে, যেগুলোর মধ্যে শরণার্থীশিবিরগুলোয় অতিরিক্ত ভিড়, তাঁবুর ভেতর তাপে-গরমে শিশুদের ঘেমে যাওয়া এবং গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়াও অন্তর্ভুক্ত।’
ইসরায়েলি সেনারা গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার আগে চিকিৎসক আল-আজাইজা বেইৎ লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে কাজ করতেন।
এখন গাজার বেশির ভাগ চিকিৎসকের মতো আল-আজাইজাও অস্থায়ী ব্যবস্থায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর নিজের বাড়িটিও ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে।
অল্প কয়েকজনকে নিয়ে আল-আজাইজা তাঁবুর ভেতর একটি অস্থায়ী ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন এবং শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। যদিও প্রয়োজনে তাঁকে পুরো পরিবারের চিকিৎসাই দিতে হচ্ছে।
যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস ছিল, যাঁদের অধিকাংশই এখন উদ্বাস্তু। প্রাণ বাঁচাতে একাধিকবার আশ্রয় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
গাজার চিকিৎসকেরা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সেখানে ওষুধ এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ক্ষতের চিকিৎসায় সাধারণ অয়েনমেন্টের একটি টিউবের দাম সেখানে এখন ২০০ শেকেল (৫৩ মার্কিন ডলার, ৬১৮৭ টাকা)।
ইসরায়েলি সেনারা মিসর সীমন্তবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রবেশ নাটকীয় রকম কমে গেছে। এ জন্য সীমান্ত ক্রসিংগুলো অবশ্যই খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।