সপ্তাহভর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে হামলার পর গতকাল রোববার আরও দুটি হাসপাতাল ঘিরে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ দুটি হাসপাতাল হলো আল-আমল ও আল–নাসর হাসপাতাল। ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলার পাশাপাশি হাসপাতাল দুটি থেকে গুলির মুখে রোগী, চিকিৎসকসহ সবাইকে পালাতে বাধ্য করেছে
তারা। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে গত সপ্তাহ থেকে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখান থেকে ৪৮০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে তারা।
ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, গাজার হাসপাতালগুলোকে হামাসের যোদ্ধারা তাঁদের অস্ত্র রাখার ও হামলা চালানোর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে হামাস ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার খান ইউনিসে ব্যাপক বোমাবর্ষণ ও গোলা নিক্ষেপ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যেই তারা ট্যাংক নিয়ে আল-আমল ও আল–নাসর হাসপাতালে হামলা শুরু করেছে। এতে রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মী নিহত হয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের সাঁজোয়া বাহিনী আল-আমল হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে এবং এর আশপাশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমাদের কর্মীরা এ মুহূর্তে চরম বিপদের মুখে রয়েছেন। তাঁদের কোনো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইসরায়েলি সেনারা আল-আমল হাসপাতাল থেকে সবাইকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে বলছেন। হাসপাতালের রোগী ও এর বাইরে থাকা আশ্রয়হীন মানুষজনকে লক্ষ্য করে “স্মোক বোমা” ছোড়া হচ্ছে।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা খান ইউনিসে যেসব এলাকায় অস্ত্রধারীরা জড়ো হতে পারেন, এমন অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করছে। হামাসের পক্ষ থেকে সামরিক কাজে হাসপাতাল ব্যবহার করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এ সংগঠনের দাবি, বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজন রোগী ও চিকিৎসাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছেন ইসরায়েলি সেনারা। গাজায় যুদ্ধের পরিস্থিতিতেও এ হাসপাতালে সীমিতভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছিল।
খান ইউনিসের বাসিন্দারা বলছেন, ইসরায়েলি ট্যাংক আল–নাসর হাসপাতালের দিকে গেছে। এ সময় বোমাবর্ষণ ও ব্যাপক গোলাগুলি করেছেন ইসরায়েলি সেনারা।
এদিকে মিসর সীমান্তের কাছে গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় ১৫ লাখের বেশি আশ্রয়হীন মানুষ অবস্থান করছে। সেখানেও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল সেখানে বোমা হামলায় একটি ভবনের সাতজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩২ হাজার ২২৬ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৫১৮ জনের বেশি।
৭ অক্টোবর হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলে হামলা চালালে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া হামাস ২৫৩ জনকে জিম্মি করে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ব্যর্থ হয়েছে। এতে জিম্মি মুক্তি বা গাজায় বেসামরিক লোকজনের জন্য ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর মতো বিষয়গুলো আটকে গেছে। হামাসের দাবি, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে সৈন্য সরানোর প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। তারা বৈশ্বিক কোনো চাপে মাথা নত করবে না।
হামাসের দাবি, গাজায় ত্রাণ নিতে আসা ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত শনিবার গাজা সিটিতে কুয়েতের একটি ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য জড়ো হয়েছিলেন লোকজন। তাঁদের ওপর ট্যাংক থেকে হামলা করা হয়। এতে ১৯ জন নিহত ও ২৩ জন আহত হন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানায়, ক্ষুধার্ত লোকজন প্রত্যন্ত অঞ্চলে আটা ও ত্রাণ নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। দখলদার বাহিনী তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করে, যাঁরা তাদের জন্য কোনো হুমকি ছিল না। এ ঘটনা ত্রাণ পেতে অপেক্ষায় থাকা বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার সর্বশেষ ঘটনা।