আইসিজের রায়ে সব কটি বিষয়ের বিপক্ষে কেন ভোট দিলেন উগান্ডার বিচারক

আইসিজের বিচারক প্যানেলের সদস্য উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্ডে
ছবি: আইসিজের সৌজন্যে

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) যেসব ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন দুজন বিচারক। তাঁদেরই একজন উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্ডে। আইসিজের রায়ে সব কটি বিষয়ের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন তিনি।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আইসিজে গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের প্রতি ছয়টি বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার আগে বিষয়গুলো নিয়ে আইসিজের বিচারকদের মধ্যে ভোটাভুটি হয়।

ভোটাভুটিতে আইসিজের নির্দেশনার পক্ষে বিচারক প্যানেলের ১৫ জন ভোট দিয়েছেন। ২ জন বিপক্ষে ভোট দেন। এর মধ্যে ইসরায়েলের আহারন বারাক দুটি বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। আর জুলিয়া সেবুটিন্ডে সব কটি বিষয়ের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে দেন। 

এ বিষয়ে আইনজীবী ও সমসাময়িক বিষয়াবলিবিষয়ক বিশ্লেষক দানিয়েল বোয়াম্বালে বলেন, ‘বিচারক জুলিয়া বরাবরই স্বাধীনচেতা। তিনি কেমন মনোভাব পোষণ করছেন, সে সম্পর্কে আগেভাগে ধারণা করা বেশ কঠিন।’

দানিয়েলের মতে, বিচারক জুলিয়ার এমন অবস্থানের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। তিনি বলেন, উগান্ডা হয়তো নতুন করে শত্রু তৈরি করতে চাইছে না, অনেক বিশ্লেষক এমনটাই মনে করছেন। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে সমকামিতা আইন নিয়ে দেশটি উদার পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে মার্কিনপন্থীদের রোষানলে পড়েছে। জুলিয়ার এই অবস্থানের পেছনে এটা একটি কারণ হতে পারে।

এ ছাড়া ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমাদের ভাবতে হবে। দানিয়েল বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে উগান্ডার ঘনিষ্ঠ সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এটাও জুলিয়ার অবস্থানের পেছনে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা জুলিয়া প্রথম আফ্রিকান নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বিচারক প্যানেলের সদস্য হন। তিনি বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় এই দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১২ সাল থেকে এই পদে থাকা জুলিয়া ২০২১ সালে পুনর্নির্বাচিত হন।

জুলিয়া ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সিয়েরা লিওনবিষয়ক বিশেষ আদালতের একজন বিচারক ছিলেন। সেখানে তিনি বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধ ও দুর্নীতির বিচার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রেসিডেন্টের পদে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোয়ান ডানেহিউ। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন রাশিয়ার কিরিল গেভোরজিয়ান। বিচারক প্যানেলের ১৩ জন স্থায়ী সদস্য আছেন ১৩টি দেশ থেকে। দেশগুলো হলো স্লোভাকিয়া, ফ্রান্স, মরোক্কো, সোমালিয়া, চীন, উগান্ডা, ভারত, জ্যামাইকা, লেবানন, জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিল।

তাঁদের সঙ্গে এই মামলায় অ্যাডহক হিসেবে বিচারক প্যানেলে মামলার বাদী দক্ষিণ আফ্রিকা ও বিবাদী ইসরায়েল থেকে একজন করে দুজন যুক্ত হয়েছিলেন।