গাজা ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা ‘নিষ্ক্রিয়’ বলে মনে করে ব্রাজিল। গতকাল বুধবার রিও ডি জেনিরোতে অর্থনৈতিক জোট জি-২০-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধনী দিনে এ নিয়ে সমালোচনা করেছে দেশটি। জি-২০ জোটের বর্তমান সভাপতি দেশ ব্রাজিল।
গতকাল দুই দিনের বৈঠকের প্রথম দিন ছিল। এটি চলতি বছরে জি-২০ জোটের প্রথম সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।
দুই দিনের জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ব্রাজিলের শীর্ষ কূটনীতিক মাউরো ভিয়েরা বলেন, বৈশ্বিক সংঘাতের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে না। তিনি আরও বলেন, ‘গাজা ও ইউক্রেনে চলমান সংঘাত নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ অগ্রহণযোগ্যভাবে যে স্থবিরতা দেখাচ্ছে, তাতে বোঝা গেছে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার মতো করে বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাজানো হয়নি।’
সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিমালা-সংক্রান্ত প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, বহুপাক্ষিকতার বিষয়টি এখন সংকটাপন্ন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদে খোদ রাশিয়ারই ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা আছে। একই রকম করে গাজায় যুদ্ধ নিয়েও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি পরিষদ। কারণ, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে।
গত রোববার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ইনাসিও দা সিলভা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। এ নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ জানায় ইসরায়েল। লুলাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে দেশটি।
জি-২০ সম্মেলনের উদ্দেশে রওনা করার আগে বুধবার ব্রাসিলিয়াতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে লুলার সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে ব্লিঙ্কেন লুলাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর (লুলা) মন্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বৈঠকটি করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই নেতার মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে।
ব্রাজিলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আজ বৃহস্পতিবার ব্রাসিলিয়ায় লুলার সঙ্গে দেখা করবেন লাভরভ।
ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে পশ্চিমা বিশ্বের বিপুল অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন লাভরভ।
ব্রাজিলের সংবাদপত্র ও গ্লোবোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কিয়েভ কিংবা পশ্চিমা বিশ্ব—কেউই সংঘাত নিরসনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখায়নি।