শেখার কোনো শেষ নেই— কথাটি যেন নতুন করে প্রমাণ করেছেন আরব নারী নওদা আল-কাহতানি। বয়স ১১০ বছর ছুঁয়েছে। এ বয়সে নতুন করে আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু করে শোরগোল ফেলেছেন তিনি।
আল-কাহতানির বাড়ি সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উমওয়াহ এলাকায়। পড়াশোনায় আগ্রহ থাকায় স্থানীয় আল-রাহওয়া সেন্টারের সহায়তায় নতুন করে বিদ্যালয়ে ফিরেছেন এই নারী।
চার সন্তানের জননী আল-কাহতানি। বড় সন্তানের বয়স ৮০ বছর ছুঁয়েছে। সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স ৫০-এর কোটায়। বয়স, সংসার—কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি আল-কাহতানির পড়াশোনা শুরুর পেছনে। এই নারী বলেন, পড়তে আর লিখতে পারা তাঁর জীবন বদলে দেবে।
নিজেকে বদলে ফেলার এই তাড়না থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে আল-রাহওয়া সেন্টার পরিচালিত নিরক্ষরতা দূর করার একটি প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন আল-কাহতানি। এর পর থেকে নিয়মিত তিনি বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। আরও ৫০ জনের বেশি সহপাঠীর সঙ্গে ক্লাস করছেন।
আল-কাহতানির ক্লাসে বিভিন্ন বয়সের সহপাঠী রয়েছেন। তাঁরা সবাই একসঙ্গে অক্ষরজ্ঞান শিখছেন। পবিত্র কোরআনের আয়াত চর্চা করছেন।
এই বয়সে এসেও প্রতিদিন ক্লাস করা, পড়াশোনা করা, শিক্ষকের দেওয়া বাড়ির কাজ করা বেশ উপভোগ করছেন আল-কাহতানি। তিনি জানান, প্রতিদিনের বাড়ির কাজেও তিনি ফাঁকি দেন না। দিনের কাজ দিনেই শেষ করেন।
সৌদি আরবের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশা শাখার পক্ষ থেকে এক্স প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) আল-কাহতানিকে নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছে। এ পোস্টে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য সৌদি আরবের শীর্ষ নেতাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় শতবর্ষী এই নারীকে।
আল-কাহতানি বলেন, ‘আমার অনেক আগেই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা উচিত ছিল। এত বছর পরে এসে, বিশেষ করে বয়স ১০০ পেরিয়ে পড়াশোনা শুরু করাটা বেশ কঠিন ছিল।’
তবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়াটা আল-কাহতানির একার সমস্যা নয়। সৌদি আরবের ওই অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় শত শত মেয়েশিক্ষার্থীর পড়াশোনা মাঝপথে থেকে যায়। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন জনপদে বেড়ে ওঠার কারণে তাঁরা পড়াশোনা শেষ করতে পারেন না।
তবে শতবর্ষী আল-কাহতানির নতুন করে পড়াশোনা শুরু করাকে সমর্থন জানিয়েছেন তাঁর সন্তানেরা।
সন্তানেরা মনে করেন, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তাঁদের মায়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে কারও কিছু করার ছিল না।
এখন ৬০ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ প্রতিদিন সকালে মাকে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেন। ক্লাস শেষ হওয়া অবধি মায়ের জন্য সেখানে অপেক্ষা করেন। পরে মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। মা প্রতিদিন পড়াশোনা করছেন, নতুন নতুন জিনিস শিখছেন—এতে দারুণ খুশি আল-কাহতানির ছেলে।
মোহাম্মদ জানান, তাঁদের অঞ্চলে মেয়েদের জন্য মাত্র একটি হাইস্কুল আছে। সেখানে শিক্ষার্থীর চাপ অনেক বেশি থাকে। তাই প্রশাসনের কাছে তাঁর আবেদন, মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ আরও বাড়ানো উচিত। আল-কাহতানিও চান, মেয়েদের জন্য সরকার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করবে।