ইসরায়েল সরকারের কাছে দেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে গাজায় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে।
গাজার রাফায় বড় ধরনের হামলা না চালাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১৩টি দেশ। এসব দেশ ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে পরিচিত। দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পাঁচ পাতার একটি চিঠিতে সই করে তা ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের হাতে তুলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সে চিঠি জনসম্মুখেও প্রকাশ করেছেন।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা রাফায় পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযানের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করছি, যা বেসামরিক জনগণের ওপর বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যদেশ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন।
এই ১৩ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ–সুবিধা উন্নত করতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়। তবে একই সঙ্গে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল সরকারের কাছে দেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে এবং সেখানে বিধ্বংসী মানবিক সংকট মোকাবিলার উপায় রাখতে হবে। চিঠিতে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি সব দেশ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েল সরকারকে রাফাসহ সব প্রাসঙ্গিক ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার অনুরোধ করছি।’ মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় মানবিক সহায়তাকর্মী ও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে টেকসই যুদ্ধবিরতির জন্যও তাঁরা আবেদন করেন।
গাজায় হামলা শুরুর আট মাস পর রাফা শহরে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। কারণ, রাফা শহরটিতে লাখো আশ্রয়হীন মানুষ অবস্থান করছে। গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে খাদ্য, নিরাপদ পানি, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখ মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গত সপ্তাহে রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ত্রাণ সরবারহ কমে গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটিকে নির্মূলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৫ হাজার ৩০৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আরব লিগের প্রস্তাবিত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। ইসরায়েলের মতো যুক্তরাষ্ট্রও হামাসকে নির্মূলের শর্তে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়ন চায়।