গাজায় এখন কী ঘটছে

ইসরায়েলি বিমান হামলার পর গাজার ভবনগুলোয় আগুন জ্বলছে। বের হচ্ছে ধোঁয়া। ৮ অক্টোবরের ছবি
ছবি: রয়টার্স

গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসির খবর বলছে, গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা ২৩০–এরও বেশি। আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার জন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ গাজার সাতটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে।

বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজায় অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে পালানো শুরু করেছে। তারা জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) গাজাবাসী ইসরায়েলের বিমান হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ইসরায়েল নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে ফিলিস্তিনিরা। ৭ অক্টোবরের ছবি।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনো গাজায় বোমা ফেলছে। আজ রোববার সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র আল–জাজিরাকে বলেছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বন্দুকধারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। ইসরায়েলের পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

হামাসের নেতারা বলেছেন, গাজায় শুরু হওয়া হামলা দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা গতকাল শনিবার সারা রাত অন্ধকারে কাটিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ঘনবসতি–অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে। এসব হামলার পাল্টা জবাবে রকেট ছুড়ছে হামাস। তবে সেগুলোর বেশির ভাগই মাঝ আকাশে প্রতিহত করা হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল–জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে ২৩২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ৭০০ জন।

ইসরায়েলের পাল্টা বিমান হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনির লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের বাসিন্দারা। ৭ অক্টোবরের ছবি

হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি আল–জাজিরাকে বলেন, হামাস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেক ইসরায়েলিকে বন্দী করে রেখেছে। এসব বন্দীর বিনিময়ে ইসরায়েলে কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করতে পারবে হামাস। আরোরি আরও বলেন, হামাস অনেক ইসরায়েলি সেনাকে অপহরণ করেছে ও হত্যা করেছে।

জেরুজালেম পোস্টের সামরিক বিশ্লেষক ইয়োনাহ জেরেমি বব বলেছেন, ‘২০১৪ সালে ইসরায়েল ৮০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডেকেছিল। এবার তার চেয়েও বড় হামলা হচ্ছে। এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ইসরায়েলের বিশাল বাহিনী গাজায় হামলা চালাবে এবং হামাসকে হারাবে। 

পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক উইলিয়ার মার্ক্স বলেছেন, তাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে শুনেছেন, সব বিকল্প তাঁদের আলোচনার টেবিলে রয়েছে। ইসরায়েল বিশাল রিজার্ভ বাহিনী হাতে রেখেছে। হাজার হাজার রিজার্ভ বাহিনী ডাকা হয়েছে।

ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র নিয়ে তাদের গাজার দিকে যেতে দেখা গেছে। শিকাগোভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইলেকট্রনিক ইনটিফাদার সহ–প্রতিষ্ঠাতা আলি আবুনিমাহ বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। দশকের পর দশক ধরে ইসরায়েলি বর্বরতার শিকার ফিলিস্তিনিরা এবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস গতকাল সকালে ইসরায়েলে ব্যাপক রকেট হামলা চালায়। হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জবাবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালানো শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজায়। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় ২৫০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।

হামাস ইসরায়েলে এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। দখলদার ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাই এ অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সদস্যরা যেখানেই থাকুন না কেন, ইসরায়েলের সেনারা সেখানে পৌঁছে যাবে। সেখানে গিয়ে হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করে প্রতিহত করা হবে। ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন। ইসরায়েলের টেলিভিশনে তাঁর এ বক্তৃতা সম্প্রচার করা হয়।