গাজায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলের দেওয়া রূপরেখাকে গতকাল শুক্রবার ‘ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা’ করার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ রূপরেখার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কথা ঘোষণাকালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি টানার আহ্বান জানান। তবে দ্রুতই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাইডেনের শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বানে নেতিবাচক মনোভাব দেখান। জোর দিয়ে তিনি বলেন, হামাসের গাজা শাসন করার ক্ষমতা ও ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠার বিষয়টি নিঃশেষ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান জানানোর পর গতকাল সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং এ উপত্যকার পুনর্গঠন ও বন্দী বিনিময়’ নিয়ে বাইডেনের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছে তারা।
হামাসের প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া ও গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।
হামাসের প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া ও গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে এমন অগ্রগতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘জোরালো আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
আশাবাদ জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও। তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রস্তাব যুদ্ধ বন্ধে আশার আলো ও একটি সম্ভাব্য পথ দেখাচ্ছে।
গাজায় রক্তপাত বন্ধে এ ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক’ দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরে অভিযান না চালাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে গতকাল ইসরায়েলের ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণা করলেন বাইডেন।
প্রস্তাবটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। হামাস ‘নির্দিষ্টসংখ্যক’ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দী কয়েক শ মানুষকে মুক্তি দেওয়া হবে। গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাঁদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।
যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে বাস্তবায়ন শুরু করা হবে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা।
দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশিষ্ট জিম্মি মুক্তি দেবে হামাস। তাঁদের মধ্যে জিম্মি সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে গাজার জন্য বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বড় ধরনের ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে।