ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়ে গেছে সেখানকার ৬০ শতাংশ বাড়িঘর ও স্থাপনা। গতকাল রোববার ছিল ইসরায়েলি হামলার ৭৯তম দিন। অবিলম্বে এ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আগের দিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন ঘিরে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
শনিবার বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে। অক্সফোর্ড স্ট্রিটে জড়ো হন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। এতে বড়দিনের এক দিন আগে ব্যস্ততম এই বাণিজ্যিক এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে।
অধিকার সংগঠন সিস্টারস আনকাট ও বিক্ষোভের আয়োজকেরা শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘যখন একটি গণহত্যা ঘটছে, তখন স্বাভাবিকভাবে আর বড়দিন উদ্যাপন করা যায় না।’
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অধিকার সংগঠনটি লিখেছে, ‘আমরা যখন পুঁজির প্রবাহে বাধা দিই, তখন আমরা মূলত নিষ্ঠুর দখলদারত্বের মর্মেই আঘাত করি।’
যুদ্ধবিরতির দাবিতে শনিবার বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। নিউইয়র্ক শহরের বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়। গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়। এসব বিক্ষোভ থেকে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা প্রদান বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে।
এদিন লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি সেন্টারে বিপণিবিতানের সামনে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। ‘এই বড়দিনে যুদ্ধবিরতির দাবিতে কৃষ্ণাঙ্গ ও ফিলিস্তিনি সংহতি’ ব্যানারে সমাবেশ করেন তাঁরা।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরেও। ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি সংহতি জানাতে বিক্ষোভে অংশ নেয় অনেক শিশু। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত আট হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
গতকাল রোববার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, এ নিয়ে চলমান সংঘাতে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০৩।
নিহত ওই সাংবাদিকের নাম আহমেদ জামাল আল মাধোউন। তিনি সংবাদ সংস্থা আল রাই এজেন্সির উপপরিচালক ছিলেন।
গাজা সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১০৩ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আল-জাজিরা আরবির ক্যামেরাম্যান সামের আবুদাকাও রয়েছেন।
সাংবাদিকদের বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টের উপমহাসচিব টিম ডসন বলেন, ‘আর কোনো সংঘাতে এত বেশিসংখ্যক সাংবাদিকদের মৃত্যু আমরা দেখিনি।’
এদিকে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে সেখানে ২০ হাজার ৪২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৫৪ হাজারের বেশি।
এ ছাড়া ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ১৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এর আগে গাজায় একদিনে সর্বোচ্চ ১০ সেনা নিহত হয়েছিলেন।