গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে

অভিমত

নেতানিয়াহুকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে বিপাকে বাইডেন

গাজায় নির্বিচার হামলায় ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা ও নেতানিয়াহুর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে খোদ নিজের দলেই প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন বাইডেন। আবার তাঁর দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রকাশ্য বিরোধিতা করছেন নেতানিয়াহু। দুই দিকেই চাপে পড়ে বিপদে বাইডেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজার চলতি যুদ্ধ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন। খোদ তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশ এখন ইসরায়েলের প্রতি তাঁর নিঃশর্ত সমর্থনকে প্রত্যাখ্যান করছে। আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি একাকী হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর মতভেদ কার্যত প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। বাইডেন চান, গাজার যুদ্ধ শেষ করে ইসরায়েলি বাহিনী দ্রুত নিজ সীমানায় ফিরে যাক। কিন্তু নেতানিয়াহু চান গাজায় স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি সামরিক অবস্থান পোক্ত করতে। এটি তাঁর রাজনৈতিক ভরাডুবি থেকে বাঁচার একটি ঘুঁটি হতে পারে।

■ হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত আণবিক বোমার সমান শক্তির বোমা গাজায় ফেলেছে ইসরায়েল। ■ যুক্তরাষ্ট্রের ৬১ শতাংশ মানুষ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে। ■ ১৯-২৯ বছর বয়সী মার্কিন তরুণদের মাত্র ২০ শতাংশ নিজেদের ইসরায়েলপন্থী মনে করেন।

বিবির পাশে বাইডেন

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের অভাবনীয় হামলার পর প্রথম যে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ান, তিনি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি আজীবনই ইসরায়েলপন্থী। এটি শুধু তাঁর রাজনীতি নয়, তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসেরও একটি অংশ—এমন কথা তিনি নিজেই বলেছেন। নিজে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের হলেও তিনি বিশ্বাস করেন, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখা তাঁর দায়িত্ব। টাইম সাময়িকীর ভাষায়, বাইডেনই হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় ইসরায়েলপন্থী প্রেসিডেন্ট’।

বাইডেনের এই অবস্থান তাঁকে ইসরায়েলে অসম্ভব জনপ্রিয় করলেও নিজ দেশে তিনি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ইসরায়েলের বেপরোয়া বোমাবর্ষণের ফলে বেসামরিক মানুষ, বিশেষত নারী ও শিশু, বিপুল সংখ্যায় হতাহত হচ্ছে। এসব খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই ব্যাপক প্রতিবাদ ওঠে। প্রতিবাদ ওঠে বিশ্বজুড়ে।

জাতিসংঘের ভেতরে অবিলম্বে ‘মানবিক’ যুদ্ধবিরতির দাবি উঠলে বাইডেনের নির্দেশে শুধু সে প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া হয়নি, হামাস নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর এই অবস্থান শুধু আরব ও বৈশ্বিক দক্ষিণের সরকারগুলোকে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদেরও অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ভেতরের খবর জানেন এমন সূত্রগুলো জানাচ্ছে, হোয়াইট হাউসের এই অনড় অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড তাঁর অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেছেন।

বিষয়টি বাইডেনের নজর এড়িয়ে গেছে, তা নয়। তিনি ইসরায়েলের কথা উল্লেখ করে এক ঘরোয়া বৈঠকে মত প্রকাশ করেন, বেপরোয়া বোমাবর্ষণের কারণে বিশ্বে ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন কমে আসছে। তাঁর এ কথা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্র পাশে আছে বলেই ইসরায়েল এমন বেপরোয়া অবস্থান নিতে পেরেছে।

আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ জানা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে হোয়াইট ফসফরাস জাতীয় বিস্ফোরক সরবরাহ করেছে। শুধু কি তাই, ইরান বা লেবাননের হিজবুল্লাহ যাতে টুঁ–শব্দ না করতে পারে, সে জন্য তড়িঘড়ি করে যুদ্ধবিমানবাহী দুটি নৌযান পাঠিয়েছে, সঙ্গে ৭০০ নৌসেনা। কংগ্রেসকে এড়িয়ে জরুরি ভিত্তিতে ট্যাংকে ব্যবহারের জন্য গোলাবারুদ পাঠানো হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, এই যুদ্ধ যতটা ইসরায়েলের, ততটা যুক্তরাষ্ট্রেরও।

নিরাপত্তা পরিষদ

কূটনৈতিক বিপর্যয়ের বাস্তবতা হিসাবে এনে যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে নিরাপত্তা পরিষদে গত শুক্রবার গৃহীত এক প্রস্তাবে ‘আশু ত্রাণ পৌঁছে দিতে যুদ্ধবিরতি’র সমর্থনে ভেটো প্রদানের বদলে ভোটদানে বিরত থাকে। এর ফলে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্য যেমন অক্ষত থাকল, তেমনি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দাবির প্রতিও সম্মান দেখানো হলো। যাঁর দূতিয়ালিতে বিস্তর কাঠখড় পোড়ানোর পর প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, জাতিসংঘে নিযুক্ত আরব আমিরাতের সেই রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেছেন—এটি একটি দুর্বল প্রস্তাব। আরব ও কোনো কোনো ইউরোপীয় দেশ চেয়েছিল অবিলম্বে অনির্দিষ্টকালের জন্য যুদ্ধবিরতি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।

মূল খসড়া প্রস্তাবে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছিল। ইসরায়েলের চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র তাতে বাগড়া দিয়ে জানায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে তাতে লাভ হবে হামাসের। যুদ্ধ বন্ধ না হলে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু যে বন্ধ হবে না, সে ব্যাপারে অবশ্য ওয়াশিংটন কোনো রা করেনি।

আনুগত্যের কঠিন মূল্য

গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট হতাহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শুধু নিহত হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। এই সময়ে যে পরিমাণ বিস্ফোরক বিমানযোগে নিক্ষেপ করা হয়, মার্কিন গণমাধ্যমের হিসাব অনুসারে তা হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত দুটি আণবিক বোমার সমশক্তিসম্পন্ন। নির্বিচার যে বোমা ফেলা হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ ‘আনগাইডেড’ বা অনির্দেশিত হওয়ায় মানুষ মরেছে দেদার। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর গাজায় অক্ষত এমন একটি বাড়িও নেই। সচল এমন একটি হাসপাতাল নেই। খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। জাতিসংঘ থেকে বলা হয়েছে, শিশুদের জন্য গাজা হচ্ছে এক কবরস্থান।

গোড়ার দিকে মার্কিন গণমাধ্যম শুধু হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার ওপর নজর দিয়েছিল। পাল্টা হামলায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ কার্যত উপেক্ষা করেছিল তারা। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম ও আল–জাজিরা টিভির কারণে সে কথা গোপন থাকেনি। আরব অথবা পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাপক প্রতিবাদের আগে খোদ যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ ওঠে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপ থেকে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে (৬১ শতাংশ)। ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্র ভোটাররা তো বটেই, এমনকি রিপাবলিকানদের মধ্যেও ৪৯ শতাংশ মানুষ যুদ্ধবিরতির পক্ষে রায় দিয়েছেন। কংগ্রেসের ভেতরে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের একাংশ বিশেষ করে প্রগতিশীল অংশ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের দাবির পাশাপাশি কঠোর ভাষায় বাইডেন প্রশাসনের ইসরায়েল-তোষণ নীতির সমালোচনা করেছেন। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ইসরায়েলকে ‘চরমপন্থী’ আখ্যায়িত করে গাজায় বিশেষত হাসপাতালে নির্বিচার বোমাবাজিকে ‘অবর্ণনীয় অপরাধ’ বলে চিহ্নিত করেন।

বাইডেনের জন্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ইসরায়েল প্রশ্নে মার্কিন নাগরিকদের বিশেষ করে অনূর্ধ্ব–৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে নিঃশর্ত সমর্থনের প্রতিবাদ উঠেছে। একাধিক জরিপে দেখা গেছে, ১৯-২৯ বছর বয়সী মার্কিনদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ নিজেদের ইসরায়েলপন্থী মনে করেন। অন্যদিকে ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে জানিয়েছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব মার্কিনদের অবস্থান ঠিক উল্টো।

কোনো সন্দেহ নেই, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রজন্মগত পরিবর্তন আসছে। তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলকে তুষ্ট করার কোনো দায়ভার নেই। ব্যাপারটা এতটাই লক্ষণীয় যে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল তরুণ মার্কিন ভোটারদের এই পরিবর্তিত অবস্থানকে তাদের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

মার্কিন তরুণদের এই অবস্থান কেবল ইসরায়েলের জন্য নয়, বাইডেনের জন্যও হুমকি। আগামী নভেম্বরে তাঁকে ভোটে দাঁড়াতে হবে। তরুণ ভোটাররা তাঁর নির্বাচনী আঁতাতের অন্যতম শরিক। ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁর বিজয়ের পেছনে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অসন্তুষ্ট তরুণ ছাড়াও বাইডেনকে আরব ও মুসলিম ভোটারদের কথাও ভাবতে হচ্ছে। এসব ভোটারের মধ্যে এই মুহূর্তে তাঁর পক্ষে সমর্থনের পরিমাণ মাত্র ১৬ শতাংশ।

রাজনীতির এই কঠিন অঙ্ক মাথায় রেখে বাইডেনকে এখন ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের রশিটি টেনে ধরতে হচ্ছে। তিনি বেপরোয়া বোমাবর্ষণ বন্ধের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা তথা ফিলিস্তিন প্রশ্নে একটি নতুন রূপরেখা প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাবের কেন্দ্রে রয়েছে দুটি লক্ষ্য—পশ্চিম তীর ও গাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। দুই প্রস্তাবেই তাঁর জন্য প্রধান সমস্যা হলো বিবি নেতানিয়াহু।

বিবির তুরুপের তাস

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকের ধারণা, গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্রই বিবি নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। অধিকাংশ ইসরায়েলি মনে করেন, বিবি অনুসৃত নীতির কারণে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে, নিজের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের জন্য তিনিই হামাসকে শক্তিশালী করেছেন। অন্যদিকে মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কাজ করতে দেননি।

বিবি অনেকবারই বলেছেন, যত দিন গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, তত দিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। মুখে হামাসের মুণ্ডুপাত করলেও তাঁরই যোগসাজশে কাতারের কাছে পাওয়া স্যুটকেসবোঝাই ডলার হামাসের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সপ্তাহখানেক আগেও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান কাতারে এসে এই ব্যবস্থার নবায়ন করে যান। নেতানিয়াহু নিজেও মুখে বলেছেন, তাঁরই কারণে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনা এখন মৃত।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনা মৃত হলে এর বিকল্প কী? নেতানিয়াহুর চলতি মন্ত্রিসভা ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দক্ষিণপন্থী। তারা মনে করে, গাজা, পশ্চিম তীরসহ পুরো ফিলিস্তিনের ওপর তাদের ন্যায্য দাবি রয়েছে। এই পুরোটা জায়গা—ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত সেই ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হবে।

তাহলে এই অঞ্চলের প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনির কী হবে? নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বলেছেন, তাদের সঠিক স্থান হলো জর্ডান অথবা মিসরের সিনাই। তাদের সেখানেই সরে যেতে হবে। অন্যথায় ইসরায়েলের বশ্যতা স্বীকার করে এখানে টিকে থাকতে হবে।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা শুরুর পর নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে মিসরের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তারা যেন স্থানচ্যুত গাজাবাসীকে সিনাই মরুভূমিতে থাকার জায়গা করে দেয়। বলাই বাহুল্য, মিসর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মাথাব্যথা হলো, এই যুদ্ধ শেষ হলে গাজার দায়িত্ব কে নেবে? নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজায় ঢুকতে দেবেন না। তারা উভয়েই ইসরায়েলের ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’।

বাইডেনের ঘোষিত নীতিমালা অগ্রাহ্য করে নেতানিয়াহু যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সংকট সমাধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে কিছুটা হলেও বিস্ময়ের সঞ্চার করেছে। প্রকাশ্যে বাইডেনের বিরোধিতা করে তাঁর টিকে থাকা কঠিন। কিন্তু নেতানিয়াহুর হিসাব ভিন্ন। এই মুহূর্তে ইসরায়েলের ভেতরে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন নামমাত্র। এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে তাঁর ক্ষতির বদলে ভালোই হবে বলে তিনি হয়তো ভাবছেন। কট্টরপন্থীরা তাঁকে বাহবা দেবে।

এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গেও নেতানিয়াহু ইহুদি বসতি প্রশ্নে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় হোয়াইট হাউস এড়িয়ে তিনি সরাসরি মার্কিন কংগ্রেসের মাধ্যমে ইসরায়েলের জন্য সমর্থন আদায় করে নিয়েছিলেন। প্রকৃত অর্থে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে নেতানিয়াহুর প্রতিরোধের মুখে ওবামাকেই নতি স্বীকার করতে হয়েছিল।

ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎস মন্তব্য করেছে, বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য শান্তির জন্য যে অংশীদার খুঁজছেন, নেতানিয়াহু সেই লোক নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, কারও স্বার্থ রক্ষাতেই আগ্রহী নন। তাঁর একমাত্র আগ্রহ নিজের গদি বাঁচানো।

বাইডেন নিজেও সম্ভবত নেতানিয়াহুর হাত থেকে বাঁচতে চাইছেন। ওয়াশিংটনে নিজের সমর্থকদের এক সভায় তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহুর বর্তমান জোট শরিকেরা মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধান চায় না। তাঁকে এই সরকার বদলাতে হবে। শুধু জোট সরকার নয়, খোদ নেতানিয়াহু যে সমস্যার কেন্দ্রে আছেন, এ কথা আর কেউ না হোক বাইডেন খুব ভালো করেই জানেন।

সরকার পরিবর্তনের কথা বলে বাইডেন সম্ভবত নেতানিয়াহুকে সরে যাওয়ারই ইঙ্গিত দিলেন।