লোহিত সাগরে তিনটি জাহাজ নিশানা করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা ও হামলাচেষ্টার ঘটনায় সেখানে টহলরত একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার মার্কিন সামরিক বাহিনী এমন দাবি করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন দাবি করেছে, এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইয়েমেনের সরকারবিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি নিক্ষেপ করেছে।
পেন্টাগন বলছে, হামলার শিকার জাহাজগুলোকে সাহায্য করেছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কার্নি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০ দেশের সামরিক বাহিনী যুক্ত আছে যুদ্ধজাহাজটির সঙ্গে। পেন্টাগনের দাবি, ইয়েমেনের হুতিনিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। তিনটি জাহাজের মধ্যে দুটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। তবে রোববারের এসব হামলার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
এদিকে লোহিত সাগরে জাহাজ নিশানা করে এসব হামলার ঘটনা নিয়ে হুতিদের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাদের নৌ শাখা ইসরায়েলের দুটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করছে, এসব জাহাজের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীদের সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে ইয়েমেনে সরকার পতন হয়। এর পর থেকে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। সশস্ত্র হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের কিছু কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ইরান হুতিদের সামরিক ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করে পশ্চিমারা।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসকগোষ্ঠী হামাস। এর পর থেকে অনবরত বোমাবর্ষণ ও স্থলসেনা পাঠিয়ে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গাজায় প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এর প্রতিবাদে সাম্প্রতিক সময়ে লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন জাহাজে হামলা করে আসছে হুতিরা।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার সকালে সেন্টকম জানায়, এদিন লোহিত সাগরে ইউনিটি এক্সপ্লোরার নামে বাহামার পতাকাবাহী ও যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক জাহাজের অদূরে জাহাজবিধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে ইউএসএস কার্নি। এরপর কার্নির দিকে ধেয়ে আসা একটি ড্রোন ভূপাতিত করে যুদ্ধজাহাজটি। তবে সেটি হামলার জন্য মার্কিন যুদ্ধজাহাজ কার্নিকে নিশানা করেছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, একই দিন অর্থাৎ রোববার বিকেলে ইউনিটি এক্সপ্লোরারে আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। এতে জাহাজটি হালকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেন্টাগনের দাবি, হুতিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছিল। হামলার শিকার হয়েছে জানিয়ে ইউনিটি এক্সপ্লোরারের ক্রুরা সাহায্য চাইলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ কার্নি আরও একটি ড্রোন শনাক্ত ও পরে সেটি ভূপাতিত করে।
পেন্টাগন জানায়, এরপর আরও দুটি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। সেই দুটি জাহাজই পানামার পতাকাবাহী। এর মধ্যে একটির আংশিক মালিকানা যুক্তরাজ্যের। দ্বিতীয় জাহাজটিকে সাহায্যের জন্য যাওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ কার্নি তৃতীয় একটি ড্রোন ভূপাতিত করে।
সেন্টকম বলছে, হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো যে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের এবং এতে ইরান যে সাহায্য করেছে, তা বিশ্বাস করার সব রকম কারণই আছে। মিত্রদেশ ও অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্র এর উপযুক্ত জবাব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।