ইরানে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানের অন্তত ১৫টি শহরে রাতারাতি এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ চলাকালীন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ। সহিংসতায় অন্তত তিনজন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। খবর এএফপির।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনার বরাতে আজ বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা শহরের সড়কগুলোতে এ ঘটনার প্রতিবাদে র্যালি বের করে। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় প্রায় ১ হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের সড়ক অবরোধ করে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাঁরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। বেশ কিছু জায়গায় তাঁরা পুলিশের গাড়ি ও আবর্জনার স্তূপে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
ইরানে জনপরিসরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। এই বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে কি না, তা তদারক করে দেশটির ‘নৈতিকতাবিষয়ক’ পুলিশ। এই বিধির আওতায় নৈতিকতাবিষয়ক পুলিশের একটি দল গত সপ্তাহের মঙ্গলবার মাহসা আমিনি নামক ওই তরুণীকে তেহরান থেকে আটক করে। আমিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে তেহরান সফরে গিয়েছিলেন।
আটকের পর তিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মহলেও এ ঘটনার সমালোচনা করা হয়। এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নিরাপত্তা হেফাজতে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনায় নির্যাতন ও অন্যায় আচরণের যেসব অভিযোগ উঠেছে, অবশ্যই এর তদন্ত করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক দূত রবার্ট ম্যালি এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, আমিনির মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ইরানের রাজধানী তেহরান এবং উত্তর-পূর্বে মাশহাদ, উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ, উত্তরে রাশত, ইসফাহান এবং দক্ষিণে শিরাজসহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতে রাতারাতি বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা এসব শহরের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেক নারী তাঁদের হিজাব খুলে প্রতিবাদ দেখায়।
নিহত আমিনির প্রদেশ কুর্দিস্তানে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানকার গভর্নর ইসমাইল জারেই কুশা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে কখন কীভাবে এ হতাহতের ঘটনা ঘটল, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
আমিনির মৃত্যু এবং বিক্ষোভ দমনে ইরানের পদক্ষেপে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশ নিন্দা জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে গতকাল রাতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এটিকে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপবাদী অবস্থান’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক যে কিছু দেশ ইরানের সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণের সুযোগ হিসেবে তদন্তাধীন একটি ঘটনার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।