ইসরায়েলিদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ আরও সহজ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর এই ঘোষণায় দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর আল–জাজিরার
নেতানিয়াহু শনিবার বলেন, তিনি ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বন্দুকের অনুমতি ত্বরান্বিত এবং ‘অবৈধ অস্ত্র’ সংগ্রহের প্রচেষ্টা জোরদার করবেন। একই সঙ্গে দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতিস্থাপন জোরদার করার বিষয়েও নতুন পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেছে তাঁর দপ্তর।
নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর এসব ঘোষণা এসেছে। এ মন্ত্রিসভায় কট্টরপন্থী রাজনীতিকদের দাপুটে অবস্থান রয়েছে। দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের এক হামলাসহ দুটি গুলির ঘটনায় এ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছিল।
শুক্রবার পূর্ব জেরুজালেমের একটি সিনাগগের বাইরে গুলিতে সাতজন নিহত হন। অব্যাহতভাবে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই চলতি মাসের শেষ দিকে এই গুলির ঘটনা ঘটে। পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর এক অভিযানে নয় ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর এই বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনাও ঘটে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত মাসে ইসরায়েলের নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দেশটির ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ডানপন্থী সরকার। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি সামরিক দখলদারত্বে ও ইসরায়েলের মূল অংশে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বামপন্থী ইসরায়েলিরাও শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।
নতুন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী হয়েছেন ইতামার বেন-গভির আর অর্থমন্ত্রী হয়েছেন বেজালেল স্মত্রিচ। দুজনই দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি বাড়ানো এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড যুক্ত করার বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার কুখ্যাতিও আছে দুজনের। উভয়ই পশ্চিম তীরের অনেক ভেতরে বসতিস্থাপন করে বসবাস করে আসছেন।
ইসরায়েলকে ইঙ্গিত করে হাইফাভিত্তিক বিশ্লেষক ডায়ানা বাট্টু আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আপনাদের একজন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী আছেন যিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি হত্যায় বিশ্বাস করেন। আর আপনাদের একজন অর্থমন্ত্রী আছেন যিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা এখানে অস্থায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের একজন প্রধানমন্ত্রীও আছেন যিনি স্পষ্ট করছেন যে, জনগণের সশস্ত্র হওয়া উচিত এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধে তারা (ইসরায়েলি সরকার) কিছুই করতে যাচ্ছেন না। আপনি দেখতে পাবেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আরও বেশি ফিলিস্তিনি খুন হতে যাচ্ছেন।’
চিন্তক প্রতিষ্ঠান শাবাকার সিনিয়র পলিসি ফেলো ইয়ারা হাওয়ারি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ঘোষণাটি একটি উদ্বেগজনক উসকানি যা নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনেদর ওপর আরও হামলা এবং আরও বিচারবহির্ভূত হত্যার দিকে নিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা চালানোর জন্য সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সঙ্গে সব ইসরায়েলিকে সবুজ সংকেত দিচ্ছেন।’