ইরানে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যু কোনো হাতাহাতি বা মারধরের কারণে হয়নি। তাঁর মৃত্যু হয়েছে অসুস্থতার কারণে। মাসার মৃত্যুর তিন সপ্তাহ পর আজ শুক্রবার দেশটির সরকারি ফরেনসিক মেডিসিন অর্গানাইজেশন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই মেডিকেল প্রতিবেদন প্রচার করে বলে এএফপি জানিয়েছে।
হিজাবনীতি ভঙ্গ করার অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশ মাসাকে আটক করেছিল। পুলিশি হেফাজতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়। মাসার পরিবারের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় মামলাও করেছে। তবে পুলিশ বলছে, এই নারী তাদের হেফাজতে থাকলেও ‘হৃদ্যন্ত্র বিকল’ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস গতকাল বলেছে, বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তাকর্মীরা ১৫৪ জনকে হত্যা করেছেন। শত শত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অস্থির পরিস্থিতিতে মাসার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
ইরানের ফরেনসিক অর্গানাইজেশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মাসা আমিনির মৃত্যু মাথা ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আঘাতের কারণে হয়নি। আট বছর বয়সে তাঁর মস্তিষ্কে টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তখন অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু এ অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ মাসার এই অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে এক করোনার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মাসার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যাওয়ায় তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়ে। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়। আইআরএনএর বরাত দিয়ে খবরটি প্রচার করে রয়টার্স।
করোনার হলেন একজন স্বাধীন বিচারিক কর্মকর্তা, যিনি তাঁদের কাছে আসা মৃত্যুসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো তদন্ত করে থাকেন। মৃত্যুর কারণ জানতে তাঁরা ময়নাতদন্ত, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি, মেডিকেল রেকর্ডসহ প্রয়োজনীয় তদন্ত করে থাকেন।
করোনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথায় বা কোনো অঙ্গে আঘাতের কারণে তাঁর (মাসা) মৃত্যু হয়নি। তাঁর শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না, সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে তা সচল করার চেষ্টা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রথম সময়টাতে অক্সিজেনের অভাবে তাঁর মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়।’