ফিলিস্তিনের গাজার অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা এক আবেদনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার দুই দিনের শুনানি শুরু করেছেন জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। গত শুক্রবার এ আবেদন করা হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার হামলা শুরু করার পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়ে সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখন উপত্যকাটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর আবাস এ শহরেও ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। এ অবস্থায় আবার রাফা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন লোকজন।
গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিকতম আগ্রাসন নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জরুরি পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির অভিযোগ, গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে সামরিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি গণহত্যার শামিল।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো আইসিজেতে জরুরি পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির অভিযোগ, গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে সামরিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি গণহত্যার শামিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ আবেদনে বলা হয়েছে, হেগ–ভিত্তিক এ আদালতের এর আগে দেওয়া প্রাথমিক নির্দেশ ‘গাজার মানুষের অবশিষ্ট একমাত্র আশ্রয়স্থলটিতে ইসরায়েলের নৃশংস সামরিক হামলা’ প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
রাফাকে হামাস যোদ্ধাদের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে তুলে ধরছে ইসরায়েল। দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা সতর্ক করে বলে আসছে, রাফায় বড় ধরনের যেকোনো সামরিক অভিযান বেসামরিক লোকজনের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তবে এই সতর্কতা গায়ে লাগাচ্ছে না ইসরায়েল।
দক্ষিণ আফ্রিকা তার আবেদনে রাফা থেকে ইসরায়েলকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মী ও সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশের পদক্ষেপ নিতে এবং এসব দাবি কীভাবে পূরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদালতের কাছে আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাফায় ইসরায়েলি অভিযান মানবিক সহায়তা ও মৌলিক পরিষেবা, ফিলিস্তিনি চিকিৎসাব্যবস্থা টিকে থাকা ও ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে চরম ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। আবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা কনভেশন ক্রমাগত লঙ্ঘন করার অভিযোগও করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’র ওপর আইসিজেতে শুনানি চলাকালে দেশটি এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দেয়। দেশটির দাবি, গাজার বেসামরিক লোকজনদের রক্ষায় তারা সম্ভব সবকিছু করছে এবং একমাত্র হামাস যোদ্ধাদের নিশানা করছে। আর গণহত্যার অভিযোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা যে বিচার চেয়েছে, তার নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।
গত জানুয়ারিতে আদালতের বিচারপতিরা গাজায় হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ ও যেকোনো ধরনের গণহত্যামূলক কাজ প্রতিরোধে ইসরায়েলকে সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু উপত্যকাটিতে হামলা বন্ধ করা নিয়ে কোনো আদেশ দেননি। ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় হামলায় ইতিমধ্যে গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু।
মার্চে দ্বিতীয় আরেক আদেশে আদালত বলেছিলেন যে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েলকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সেখানে খাবার, পানি, জ্বালানি ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও স্থলসীমান্ত খুলে দেওয়ার বিষয়টি।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে ভূমিকা রাখেন জাতিসংঘের এ আদালত। এর আদেশ মানতে বাধ্য হলেও তা প্রয়োগের কোনো কার্যকর উপায় আদালতের হাতে নেই। এ আদালতের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।